শতদ্রু নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পাকিস্তানের পাঞ্জাবে বন্যার হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল শনিবার গণ্ডা সিং ওয়ালা এলাকায় নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সময় পানির প্রবাহ রেকর্ড হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৬৬ কিউসেক। এ অবস্থায় পাঞ্জাব সরকার নদী তীরবর্তী হাজার হাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট ভারী বৃষ্টি হতে পারে। রাজস্ব বোর্ডের এক হাইড্রোলজিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়, গণ্ডা সিং ওয়ালার পরিস্থিতি সংকটজনক এবং তা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
মধ্য ও দক্ষিণ পাঞ্জাবের জেলা প্রশাসনগুলো নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে নিতে কাজ করছে। রেসকিউ ১১২২ এর মুখপাত্র ফারুক আহমদ জানান, প্রদেশের বন্যা-কবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কাসুর, ওকারা, পাকপাট্টন, বাহাওয়ালনগর এবং ভেহারি জেলাগুলোর জন্য উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইন্দুস, চেনাব, রবি, শতদ্রু ও ঝিলম নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে মোট ১৯ হাজার ৯৪৭ জনকে সরিয়ে নিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
সংকটের মূল কেন্দ্রবিন্দু এখনো শতদ্রু নদী। অন্যদিকে তারবেলা ও কালাবাগে সিন্ধু নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, চেনাব ও রবি নদী স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রয়েছে। ডেরা গাজি খানের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যদিও বর্তমানে সেগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক।
এদিকে চলমান বৃষ্টিপাত গিলগিত-বালতিস্তানেও (জিবি) ভারি বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা ডেকে আনতে পারে। গতকাল তালিদাস গ্রামে হিমবাহ স্রোতে শত শত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভূমিধস ও বন্যার কারণে সমগ্র পার্বত্য এলাকায় সড়কপথ, বিশেষত শানদুর-ঘিজার সড়ক, বন্ধ হয়ে গেছে।
বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গতরা পানীয় জল ও সেচের পানির সংকটে পড়েছেন। পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশনের জিবি সমন্বয়ক ইসরারউদ্দিন ইসরার জানান, ঘিজার জেলার তালিদাস গ্রামে বন্যায় ৩৩০টি পরিবারের তিন হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরহারা হয়ে পড়েছে।
পিডিএমএ সদর দপ্তরে এক জরুরি বৈঠক শেষে প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির চেয়ারম্যান খাজা সালমান রফিক বলেন, ‘শতদ্রু ও রবি নদীর চর এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সরিয়ে নেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের সম্পদ ব্যবহার করা হচ্ছে।’
মুলতানের ডেপুটি কমিশনার ওয়াসিম হামিদ সিন্ধু বলেন, ‘যেকোনো সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’
প্রাদেশিক সরকার নাগরিকদের উদ্ধার সংস্থাগুলোর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে, জলাশয়ের আশেপাশে সব ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রম এড়িয়ে চলতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে অবিলম্বে পিডিএমএ হেল্পলাইন ১১২৯–এ যোগাযোগ করতে আহ্বান জানিয়েছে।