ইরান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মাদ মারান্দি ইজাদি আল জাজিরাকে বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করেও কোনো লাভ হয়নি—এমন অভিযোগ তুলে এনপিটি থেকে সরে আসতে পারে ইরান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটির ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারে তারা।
ইজাদি বলেন, ইরান এই চুক্তির সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অথচ এই সহযোগিতা কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি; বরং ইরানের সেসব পারমাণবিক স্থাপনা ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। কিন্তু হামলার শিকার হওয়া সব স্থাপনাই আইএইএর নিয়মিত নজরদারিতে ছিল। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এটি একেবারেই বেআইনি।
ইজাদি আরও বলেন, এই চুক্তির সদস্য না হয়েও অনেক দেশ পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েল নিজেই তার বড় উদাহরণ। ইরান যদি এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসে, তাতে বৈধতার কোনো অভাব হবে না।
ইজাদি দাবি করেন, ইরানের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই বর্তমানে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে রয়েছেন এবং বিষয়টি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয়ভাবে আলোচনার টেবিলে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি এনপিটি থেকে সরে আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির পরমাণু কর্মসূচি আরও বিতর্কিত হয়ে উঠবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের কারণ হিসেবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দায়ী করছে ইসরায়েল ও এর মিত্ররা। ১২ দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলায় অগ্নিগর্ভ ইরান-ইসরায়েল দুই দেশ। ২২ জুন ইসরায়েলের হয়ে এই সংঘাতে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানের তিন পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফরদো ও ইস্পাহানে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিক্রিয়া কাতার, বাহরাইন, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর পরপরই সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল।
এরপর কয়েক ঘণ্টা নানা নাটকীয়তার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল।