ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক স্থাপনার কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকজন বিজ্ঞানী-সম্পর্কিত ক্লাসিফায়েড নথিও প্রকাশ করা হয়। ইরানের রাষ্ট্র পরিচালিত সম্প্রচারমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল–মায়েদিন।
ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে ইসরায়েলে পরিচালিত জটিল এক গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে এসব তথ্য হাতে আসে। তেহরানের কর্মকর্তারা একে ইসরায়েলি দখলদারত্ববিরোধী বড় নিরাপত্তা সাফল্য বলে দাবি করেছেন।
ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী এসমাইল খাতিব জানান, এই অভিযানে ইসরায়েলের পারমাণবিক ও নিরাপত্তা সংস্থার ভেতরের কয়েকজন কর্মী সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা নথি গোপনে তেহরানে পাঠান। খাতিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত হবে ‘নিজের কর্মীদের জীবনের মানোন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখা। কারণ, তাঁদের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন।’
খাতিব দাবি করেন, ইরানের হাতে পৌঁছানো আর্কাইভে ‘কয়েক লাখ পৃষ্ঠাজুড়ে বহুমুখী ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ রয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার পুরোনো ও চলমান অস্ত্র প্রকল্প, পুরোনো পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের পরিকল্পনা, যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের নথি।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ওই নথিতে অস্ত্র প্রকল্পে জড়িত ব্যক্তিদের নাম ও সংগঠন কাঠামোও রয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, ইসরায়েলি দখলদারত্বের সহযোগিতার অভিযোগে কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েল সব সময় ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভেতরে অনুপ্রবেশের ব্যাপ্তি আড়াল করার চেষ্টা করেছে।
গত শনিবার আল–মায়েদিনকে দেওয়া তথ্যে এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র জানায়, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ইসরায়েলসংক্রান্ত বিপুল পরিমাণ গোপন কৌশলগত নথি ও তথ্য সংগ্রহে সফল হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই তথ্যের মধ্যে ‘ইসরায়েলি দখলদারদের প্রকল্প ও তাদের পারমাণবিক স্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত হাজারো নথি’ রয়েছে।
সূত্রের দাবি, অভিযানটি বেশ কিছুদিন আগে সম্পন্ন হয়। তবে বিপুল পরিমাণ নথি সংগ্রহ ও নিরাপদে ইরানে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার কারণে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। সূত্র আরও জানায়, সমস্ত নথি নিরাপদ স্থানে পৌঁছেছে। নথি, ছবি, ভিডিওসহ পুরো আর্কাইভ এতটাই বিশাল যে, এগুলো শুধু পর্যালোচনা করতেই অনেক সময় লাগবে।
এ ঘটনা এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ইসরায়েল বারবার ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংসে সামরিক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।