হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ গণহত্যারই নামান্তর: জাতিসংঘ

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে এই পরিবারের মতো হাজারো পরিবার বারবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও সৃষ্ট জীবনধারণের অযোগ্য পরিবেশকে গণহত্যার বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘের এক বিশেষ তদন্ত কমিটি। গাজায় ইসরায়েলি কার্যপ্রণালির বিশ্লেষণ সংক্রান্ত কমিটিটি নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রাণঘাতী পরিস্থিতি চাপিয়ে দিয়েছে এবং এ কারণে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) এই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এমন নীতির পক্ষে কথা বলছেন, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ—খাদ্য, পানি ও জ্বালানি থেকে বঞ্চিত করছে। এসব বক্তব্য এবং মানবিক সহায়তায় অবৈধ হস্তক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরায়েল জীবন রক্ষাকারী উপকরণকে রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থে ব্যবহার করছে।’

প্রতিবেদনটিতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও সিরিয়ার গোলান মালভূমির ঘটনাবলি পর্যালোচনা করেছে। বিশেষ করে, গাজার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিদের ওপর কেমন ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে তা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেছে।

কমিটি আরও বলেছে, ‘গাজায় অবরোধ, মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টি, বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা এবং আন্তর্জাতিক আদালত ও নিরাপত্তা পরিষদের নির্দেশ উপেক্ষা করে ইসরায়েল অনাহার ও গুরুতর আঘাতের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সামষ্টিক শাস্তি প্রয়োগ করছে।’

প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার ফলে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো বিধ্বস্ত হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত বিপর্যয়ের কথাও বলা হয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকেই প্রায় ২৫ হাজার টন বিস্ফোরক—যা দুটি পারমাণবিক বোমার সমতুল্য—গাজায় নিক্ষিপ্ত হয়। যার ফলে অঞ্চলটির পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বিষাক্ত দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে।

কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘পানি, পয়োনিষ্কাশন ও খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে এবং পরিবেশে বিষাক্ত দূষণ ছড়িয়ে ইসরায়েল এমন এক প্রাণঘাতী সংকট তৈরি করেছে, যার প্রভাব বহু প্রজন্ম ধরে থাকবে।’

প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এআইনির্ভর লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্বেগজনক দিক তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তি বেসামরিক লোকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, এর কারণে প্রাণহানি বেড়ে এবং হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। কমিটি বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী এআই-নির্ভর লক্ষ্য নির্ধারণ এবং ভারী বোমা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুর পার্থক্য মানছে না, যা বেসামরিক প্রাণহানি এড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বের অবহেলার ইঙ্গিত দেয়।’

গাজার ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি ইসরায়েলি সেন্সরশিপ, মতপ্রকাশে বাধা এবং সাংবাদিকদের ওপর দমনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ব থেকে তথ্য প্রবাহ বন্ধের চেষ্টা করছে বলেও জানায় কমিটি। সামাজিক মাধ্যমে প্যালেস্টাইনপন্থী কনটেন্ট মুছে ফেলা এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া পোস্টগুলোর তুলনায় বৈষম্যমূলক আচরণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘জাতিসংঘ এবং তাদের সহায়তাকারী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ—এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও আক্রমণের মাধ্যমে সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চলছে।’ কমিটি জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থামাতে এবং তাদের আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহির আহ্বান জানিয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনটি আগামী ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯ তম অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন

পশ্চিম তীরে এক বছরে ১৫০০ বাড়ি ভেঙেছে ইসরায়েল, ভাঙবে আরও ২৫টি

বৃষ্টি, বন্যা আর আবর্জনা: গাজাবাসীর অন্তহীন শীতের রাতের দুঃসহ বেদনা

গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

সিরিয়ায় আইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা এবং এক দোভাষী নিহত

এবার ডিজেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করল ইরান, বাংলাদেশিসহ ১৮ ক্রু আটক

ইরানে দুইবার সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন: মার্কিন দূত

জানুয়ারিতেই হতে পারে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, সেনা প্রস্তুত করছে ইন্দোনেশিয়া

তীব্র শীতে গাজায় প্রাণ সংহারকারীর ভূমিকায় ‘বায়রন’, নিহত অন্তত ১৪