‘গত এক বছরে এই প্রথম সকালবেলা মাকে ফোন বা মেসেজ দিতে পারলাম না’—এভাবেই নিজের উদ্বেগের কথা তুলে ধরলেন বিদেশে অবস্থান করা এক ইরানি। গতকাল বুধবার থেকে ইরানে ইন্টারনেট সংযোগ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশটির ভেতর থেকে ভিডিও ও ছবি পাওয়া অনেকটাই কমে গেছে।
এই ইন্টারনেট সীমাবদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইসরায়েল জাতীয় যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে সামরিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি জানিয়েছে, ইন্টারনেট না থাকায় শুধু ছবি বা ভিডিও পাঠানো নয়, ইরানে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। সদর দপ্তরে সরাসরি রিপোর্টিং করতে পারছে না বিবিসি পারসিয়ানও।
এই অবস্থায় ইরানে বসবাসকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নিরাপদ ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এই অ্যাপগুলোর ব্যবহারও দেশটিতে নিষিদ্ধ। ফলে অনেকে ভিপিএন ব্যবহার করে এসব বাধা অতিক্রমের চেষ্টা করছেন। তবে এই ভিপিএন ব্যবহারেও এখন জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় প্রবাসে বসবাসরত ইরানিদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। জার্মানিতে বসবাস করেন ইরানের নাগরিক সেপিদেহ। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘গতকাল বুধবার বিকেল থেকে পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ। হোয়াটসঅ্যাপে কল করতে পারছি না। সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগের কোনো উপায়ই নেই। আমি এখন খুব উদ্বিগ্ন। কারণ, জানি না আমার পরিবারের কী অবস্থা।’
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আমিনও একই ধরনের সমস্যার কথা জানান। কয়েক দিন ধরে পরিবারের কারও সঙ্গেই তাঁর কথা হয়নি। আমিন বলেন, ‘আমি সরাসরি কল দিলেও কেউ ধরে না। এই অবস্থায় আমি কোনো কাজও করতে পারছি না।’
বিদেশে থাকা অনেক ইরানিই এখন চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। কারণ, তাঁরা জানেন না তাঁদের প্রিয়জনেরা নিরাপদে আছেন কি না। একজন বলেন, ‘আমি ভাবছি, যদি কখনো পরিবার ছেড়ে না আসতাম! তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা থামাতে পারছি না।’
ইরানের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সংযোগ শুধু যোগাযোগ নয়, মানসিক স্বস্তিরও একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইরানিদের অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে।