২০ দিনের ব্যবধানে ভারতে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। রাজস্থানের জয়পুরের নীরজা মোদী স্কুলের চারতলা থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আমাইরা মীনা (৯) আত্মহত্যার পর এবার দিল্লিতে দশম শ্রেণির এক ছাত্র শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ এনে আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে দিল্লির একটি নামকরা স্কুলের দশম শ্রেণির ১৬ বছর বয়সী ওই ছাত্র রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার ব্যাগ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সে তার শিক্ষকদের দোষারোপ করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলেটির বাবা তিন শিক্ষিকা ও স্কুল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে ওই ছাত্র লিখেছিল, ‘দুঃখিত মা, তোমার মন অনেকবার ভেঙেছি, এবার শেষবারের মতো ভাঙব। স্কুলের শিক্ষকেরা এমনই, কী আর বলব?’
বুধবার দায়ের করা এফআইআরে কিশোরের বাবা জানান, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭টায় তাঁর ছেলে স্বাভাবিক সময়ে স্কুলের জন্য বের হয়েছিল। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে তিনি একটি ফোনকল পান, তাঁর ১৬ বছর বয়সী ছেলে দিল্লির রাজেন্দ্র প্লেস মেট্রো স্টেশনের কাছে আহত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি ওই ব্যক্তিকে তাঁর ছেলেকে স্থানীয় বিএল কাপুর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর পরিবারকে জানানো হয়, তাঁর ছেলে মারা গেছে।
বাবার অভিযোগ, তাঁর ছেলে তিনজন শিক্ষক ও স্কুল অধ্যক্ষের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছিল। তিনি জানান, ছেলের বন্ধুরা তাঁকে বলেছে যে একজন শিক্ষক চার দিন ধরে তাঁকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছিলেন।
আরেকজন শিক্ষিকা একবার তাঁর ছেলেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জানান, মঙ্গলবার ড্রামাটিকস ক্লাসের সময় তাঁর ছেলে পড়ে গেলে একজন শিক্ষক তাঁকে ‘ওভার-অ্যাক্টিং’ বলে অপমান ও উপহাস করেন। তাঁকে এতটাই বকা দেওয়া হয় যে সে কাঁদতে শুরু করে। তখন শিক্ষক তাঁকে বলেছিলেন, সে যত খুশি কাঁদতে পারে, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না।
তিনি বলেন, এসব যখন ঘটছিল, তখন অধ্যক্ষও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি তা থামাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি জানান, শিক্ষকদের দ্বারা মানসিক হয়রানি নিয়ে তাঁর ছেলে আগেও অভিযোগ করেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে অভিযোগ করা সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সুইসাইড নোটটিতে ছাত্রটি লিখেছে, যদি তার শরীরের কোনো অঙ্গ ‘কাজ করার মতো অবস্থায়’ থাকে, তবে তা যেন ‘কাউকে দান করে দেওয়া হয়’।
সুইসাইড নোটে ছেলেটি তার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে অন্য কোনো শিশুকে তার মতো পরিণতি ভোগ করতে না হয়। সে তার বড় ভাই (যার বয়স ২০ বছর) এবং বাবার কাছেও ক্ষমা চেয়েছে। পাশাপাশি তার মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বাবা ও ভাইয়ের পাশে থাকার অনুরোধ করেছে।