ভারতের মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলার চাঁদসাইলি ঘাটে একটি মিনি ট্রাক খাদে পড়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ১৫ জনের বেশি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিনি ট্রাকটিতে প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁরা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন।
গতকাল শনিবার সকাল প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি প্রায় ২০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রাকটি প্রথমে পাথরে ধাক্কা খায় এবং এর পরপরই গভীর খাদে পড়ে যায়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তালোদা থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে দুর্গম এলাকা ও মোবাইল নেটওয়ার্কের অনুপস্থিতির কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ট্রাকটির সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়েমুচড়ে গেছে।
আহত ব্যক্তিদের প্রথমে তালোদা সাবডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালে ও পরে নন্দুরবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর আহত কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নাশিকের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
নন্দুরবার জেলার পুলিশ সুপার শ্ৰবণ দাথ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চালককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
জেলা প্রশাসক নীলেশ সাগর বলেন, চাঁদসাইলি ঘাট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে দ্রুত সুরক্ষা বেড়া ও গতিনিয়ন্ত্রণ চিহ্ন বসানো প্রয়োজন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও দুই কিশোর রয়েছে। আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে ভিড় করেছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চাঁদসাইলি গ্রামের বাসিন্দা প্রমীলা পাটিল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী আর ভাই দুজনেই সেই ট্রাকে ছিল। কেউ ফিরল না।’
নন্দুরবার হাসপাতালের চিকিৎসক আনন্দ রাও বলেন, ‘১৫ জন আহত ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
নন্দুরবারের বিধায়ক ভারত প্যাটেল এ দুর্ঘটনার জন্য প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে দ্রুত রাস্তার সংস্কার ও ঘাটটিতে গার্ডরেল বসানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘এ ঘাটে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করেন, কিন্তু গার্ডরেল নেই। এটা প্রশাসনের অবহেলা। আমরা অবিলম্বে রাস্তার সংস্কার দাবি করছি।’
পরিবহন দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চাঁদসাইলি ঘাটে এর আগেও অন্তত ১২টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, অথচ এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সুরক্ষাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়েছে—কোনো নিখোঁজ যাত্রী রয়ে গেছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে। উদ্ধারকারী দলের সদস্য মহেশ যাদব বলেন, ‘আমরা সারা রাত কাজ করেছি। গাড়িটা সম্পূর্ণ ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল, লোহার টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।’