হোম > বিশ্ব > ভারত

শ্রীলঙ্কার যে দ্বীপ নিয়ে ভারতে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চলছে

ভারতের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধের সূচনা করেছে শ্রীলঙ্কার একটি ছোট ও জনবসতিহীন দ্বীপ। কচ্চতিভু নামের ওই দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১.৯ বর্গকিলোমিটার। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মূল ভূমি থেকে প্রায় সমান দূরত্বে এর অবস্থান।

বিবিসি জানিয়েছে, দ্বীপটিতে পানীয় জলের কোনো উৎস নেই। আর এর মধ্যে একটিমাত্র স্থাপনা রয়েছে। সেই স্থাপনাটি হলো একটি গির্জা। প্রতিবছর এই গির্জায় তিন দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠান হয়। এতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশ থেকেই তীর্থযাত্রীরা অংশ নেন।

১৯২১ সাল থেকে ভারত ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশের শাসকেরাই কচ্চতিভুর আশপাশের অঞ্চলে মাছ ধরার অধিকার দাবি করে আসছিল। তবে ১৯৭৪ সালে ওই দ্বীপের ওপর থেকে দাবি ত্যাগ করে বিরোধের অবসান ঘটায়। এর দুই বছর পর ভারত ও শ্রীলঙ্কা একে অপরের জলসীমায় মাছ না ধরার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

বিপত্তির শুরুটা হয়েছে সেই চুক্তি থেকেই। কারণ সে সময় ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বর্তমান বিরোধী দল কংগ্রেস। আর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই বিষয়টিকেই কংগ্রেসবিরোধী প্রচারণায় পুঁজি করেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। ১৯৭৪ সালে শ্রীলঙ্কাকে ওই দ্বীপ দিয়ে দেওয়ার জন্য কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

তবে কংগ্রেস দাবি করেছে, ভোটের মাঠের হতাশা থেকেই পুরোনো ওই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে বিজেপি। বিতর্ক সৃষ্টি করে ১৯ এপ্রিল তামিলনাড়ুতে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটে লাভবান হতে চাইছে ক্ষমতাসীনেরা।

বিতর্কটি সবচেয়ে জোরালো হয়ে ওঠে গত রোববার। সেদিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর অ্যাক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এক টুইটে বলেন, ‘চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা! নতুন তথ্য হলো, কী নির্মমভাবে কংগ্রেস কচ্চতিভুকে ত্যাগ করেছিল।’

তামিলনাড়ু রাজ্যের বিজেপির প্রধান কে আন্নামালাইয়ের দ্বারা উদ্ধার করা নেহরুর আমলের একটি সরকারি নথির ওপর ভিত্তি করে ওই মন্তব্য করেন মোদি। নথিগুলো সেই সময়ের ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে উদ্ধৃত করে বলেছিল—‘তিনি (নেহরু) কচ্চতিভুকে কোনো গুরুত্ব দেননি এবং এর ওপর থেকে ভারতের দাবি ছেড়ে দিতে তিনি কোনো দ্বিধা করবেন না।’

তবে বর্তমান বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন, কচ্চতিভুকে নিজেদের অধীনে রাখার জন্য আইনিভাবে এগিয়ে ছিল ভারত। কারণ দ্বীপটি ১৮৭৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসন করেছিলেন একজন ভারতীয় রাজা।

১৯৭৪ সালে যখন নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ভারত সরকার ওই দ্বীপের অধিকার ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটায়। তারপর থেকে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মিত কচ্চতিভু দ্বীপের ইস্যু উত্থাপন করে আসছে এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে দলগুলো আদালতেও পর্যন্ত গেছে। এই ইস্যুতে অন্তত দুটি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। ভারতের তামিলনাড়ুর জেলেরা প্রায় সময়ই কচ্চতিভুসহ জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের দ্বারা গ্রেপ্তার হয়। তাই পুরোনো ওই সমস্যাটি প্রায় সময়ই ওই রাজ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

বিষয়টি নিয়ে মোদির মন্তব্যের পর তাঁর দলের আরও অনেক নেতা এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন। তাঁরা এটাও বলছেন, বর্তমানে তামিলনাড়ুর রাজ্য ক্ষমতায় থাকা ডিএমকে দল ১৯৭৪ সালেও ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কচ্চতিভুকে ধরে রাখার জন্য তারাও কোনো চেষ্টা করেনি। তবে ডিএমকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার আগে দ্বীপের ওপর দাবি ত্যাগের বিষয়ে তারা অবগত ছিল না।

বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তিনি দাবি করেন—বিষয়টি জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে অনেক দিন লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

এ অবস্থায় ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৯৭৪ সালের চুক্তি পুনর্বিবেচনার পরিকল্পনা করেছে কি-না জানতে চাইলে জয়শঙ্কর জানান, বিষয়টি আদালতে রয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করেছিল, তারা শ্রীলঙ্কা থেকে কচ্চতিভুকে ফিরিয়ে নিতে পারে না। কারণ এটি ত্যাগের মধ্য দিয়ে ভারতের অন্তর্গত কোনো অঞ্চল হস্তান্তর করা হয়নি বা সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ করা হয়নি।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভারতে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনকে ইমেইল করেছে বিবিসি এবং উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে।

শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী জীবন থন্ডামান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, কচ্চতিভুর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ভারত কখনোই তাদের সঙ্গে সরকারিভাবে কোনো যোগাযোগ করেনি। কচ্চতিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে পড়ে বলেও দাবি করেন তিনি।

পেহেলগাম হামলায় এনআইএর চার্জশিট, ৫ ব্যক্তির সঙ্গে এলটিই-টিআরএফও অভিযুক্ত

হিমালয়ে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক যন্ত্র ৬০ বছর পরও গঙ্গার জন্য ঝুঁকি

আরও ৩০০ কোটি রুপির ইসরায়েলি ‘হেরন মার্ক টু’ ড্রোন কিনছে ভারত

দিল্লিতে ঘন ধোঁয়াশায় ৪০ ফ্লাইট বাতিল, বিলম্বিত ৩০০

ভারতে বসে বাংলাদেশে সন্ত্রাস— ঢাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান দিল্লির

বায়ুদূষণ সূচকে সর্বোচ্চ সীমায় দিল্লি, জনজীবন বিপর্যস্ত

পাকিস্তানের গুপ্তচর সন্দেহে আসামে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

এবার ভারতের ওপর মেক্সিকোর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা

ভারতের নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ড: মালিক ভ্রাতৃদ্বয় থাইল্যান্ডে আটক