ভারতে শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ইস্যুর কোনো অভাব নেই। কিন্তু সেই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে তুলতে ব্যর্থ বিরোধীরা। গত সাত বছরে এমনটাই ধরা পড়েছে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে। সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক গণমাধ্যমে তীব্র কটাক্ষ আর জাতীয় সংসদে হই-হট্টগোলের মধ্যেই থেমে রয়েছে মোদী হটাও যাবতীয় কর্মসূচি। পথে নেমে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলনের ঝাঁঝ মোদী জমানা শুরু হতেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ভারতে। কৃষকেরা আন্দোলন চালালেও সেই আন্দোলনকেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের হাত ধরে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। কৃষি আইনের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক নিশ্চয়তা তুলে দেওয়া হয়েছে পুঁজিপতিদের হাতে। করোনা নিয়ে সরকারের ব্যর্থতা এবং মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ মোদী সরকার। পেগাসাস আড়ি পাতা কেলেঙ্কারিতে দেশবাসীর মৌলিক অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ, ভাড়া দেওয়ার নামে ভারতের জাতীয় সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাতে। কিন্তু এত কিছুর পরও ভারতে গণ-আন্দোলন নেই বললেই চলে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সাংবাদিক সম্মেলন করে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছে মোদী সরকারকে। বাকি দলগুলোও তাই। কিন্তু পথে নেমে আন্দোলনের দেখা নেই। বরং ভারতের প্রধান বিরোধী দল নিজেদের গোষ্ঠীকোন্দলেই বেশি ব্যস্ত।
তাই বিভিন্ন রাজ্যে অতীতে জনমত কংগ্রেসের পক্ষে গেলেও সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় শতাব্দী প্রাচীন দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কংগ্রেস শাসিত পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়েও সরকার কত দিন টিকবে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রদেশে ভোটে জিতেও সরকার ধরে রাখতে পারেনি। গত কয়েক বছরে এমন উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। কংগ্রেসের প্রতি জনসাধারণের পাশাপাশি তাঁদের নেতারাও আস্থা হারাচ্ছেন। তবু কোনো হেলদোল নেই। ফলে মার খাচ্ছে বিরোধীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা।
সম্প্রতি কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূল-সহ বেশ কয়েকটি দল বিজেপির মোকাবিলায় ঘনঘন বৈঠক করতে শুরু করেছে। সংসদেও ঝড় তুলেছেন তাঁরা সংঘবদ্ধভাবে। তবে পথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলন এখনো দূরঅস্ত। সামনেই ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটকেই অনেকে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সেমিফাইনাল বলে মনে করছেন। কিন্তু কংগ্রেস নিজেদের ঘর ধরে রাখাতেই সমস্যায় পড়েছে। সুবিধা পাচ্ছে বিজেপি। এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।