ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’-কে বিভক্ত ও অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক সম্প্রীতির নামে কংগ্রেস তুষ্টিকরণের রাজনীতি করেছে এবং আজও সেই রাজনীতি বহন করছে।
মোদি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মুসলিম সমাজের আপত্তির ভয়ে ‘বন্দে মাতরম’ গানটি পুরোপুরি গ্রহণে দ্বিধাবোধ করেছিলেন। নেহরুর একটি চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে মোদি দাবি করেন—নেহরু সুভাষচন্দ্র বসুকে গানটির পটভূমি মুসলমানদের ক্ষুব্ধ করতে পারে বলে লিখেছিলেন। মোদির ভাষ্য অনুযায়ী, এই চিঠি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর লক্ষ্ণৌতে প্রতিবাদের পর লেখা হয়েছিল।
মোদি আরও অভিযোগ করেন, কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে বাংলায় এক অধিবেশনে গানটির ব্যবহার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। মোদি বলেন, ‘২৬ অক্টোবর তারা বন্দে মাতরমকে দুই ভাগে ভেঙে দিল—সামাজিক সম্প্রীতির মুখোশ পরে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এটি ছিল তুষ্টিকরণের রাজনীতি। যেমন তারা গান বিভক্ত করেছে, তেমনই পরে দেশও বিভক্ত করেছে।’
মোদি দাবি করেন—মুসলিম লিগের চাপে কংগ্রেস নত হয়েছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় দেশভাগ ঘটেছিল। তিনি বলেন, ‘বন্দে মাতরমের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধী ১৯০৫ সালে লিখেছিলেন—এই গান ইতিমধ্যে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়েছে। তবে এরপরও কেন গানটির প্রতি অবিচার করা হলো?’
তিনি বলেন, বন্দে মাতরম শুধু গান নয়—এটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের শক্তির উৎস। গানটি ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করেছিল এবং ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
বক্তব্যের শেষ দিকে মোদি বলেন, ‘এখন আমাদের সুযোগ এসেছে বন্দে মাতরমের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত আমরা হাতছাড়া করতে পারি না।’
এদিকে বন্দে মাতরম নিয়ে বক্তৃতায় গানটির স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে একাধিকবার ‘বঙ্কিমদা’ শব্দটি উচ্চারণ করেন। তবে প্রায় এক ঘণ্টার ওই বক্তৃতার মাঝপথেই এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। মোদিকে থামিয়ে তিনি ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধনে আপত্তি জানিয়ে বলেন, অন্তত ‘বাবু’ বলুন।