হোম > বিশ্ব > ইউরোপ

যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারবিরোধী বড় সংস্কারের উদ্যোগ, আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের আপত্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ব্রিটেনে আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের সংগঠনগুলো দেশটির অর্থপাচারবিরোধী নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে তাদের ফাইন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটির (এফসিএ) তত্ত্বাবধানে আনার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির অর্থপাচারবিরোধী দুর্বলতা মোকাবিলায় ২৩টি সংস্থা থেকে প্রায় ৬০ হাজার আইন ও হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তদারকি দায়িত্ব সরিয়ে তা এফসিএ-এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যেসব সংস্থা বর্তমানে এই তদারকি করে ফি আয় করে থাকে, তারা এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এতে খরচ বাড়বে, ব্যবসায় বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেবে এবং অনেকের ফি হারিয়ে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএইডব্লিউ) নিয়ন্ত্রক বোর্ডের চেয়ারম্যান পারজিন্দার বাসরা বলেছেন, এ সিদ্ধান্তে তারা ‘হতাশ।’ তাঁর ভাষায়, ‘এটি প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপ ও খরচ তৈরি করবে, যা ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর ইনস্টিটিউট শিগগিরই মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবে, যাতে এই সিদ্ধান্তের সব দিক আলোচনায় আসে এবং বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া যায়।

অনেক বিশেষজ্ঞ বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, যুক্তরাজ্যের পেশাজীবী সেবাখাত—বিশেষ করে আইনজীবী, হিসাবরক্ষক এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারীদের তদারকিতে নানা সংস্থা জড়িত থাকায় এখানে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থ সহজেই ঢুকে পড়ে।

অর্থ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে, বিশেষত পেশাজীবী সেবাখাতে তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অসামঞ্জস্যতা যুক্তরাজ্যের অর্থপাচারবিরোধী কাঠামোর একটি ‘গুরুতর ঝুঁকি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের গবেষণা ও অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান স্টিভ গুডরিচ বলেন, ‘এই সংস্কার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। যুক্তরাজ্যের ভাঙা অবৈধ অর্থ তদারকি ব্যবস্থাকে ঠিক করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

অভিযানভিত্তিক সংস্থা স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, এই ক্ষমতা এফসিএ—এর হাতে গেলে ‘আইন ও হিসাবরক্ষণ খাতে বড় ধাক্কা লাগবে, কারণ এত দিন তাদের তদারকি সংস্থাগুলো তাদের প্রতি নরম আচরণ করেছে।’

তবে এ নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ব্যয়বহুল মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে এবং এফসিএ এত বড় দায়িত্ব সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউনট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশনের কৌশল ও পরিচালনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ম্যাগি ম্যাকগি বলেন, ‘এই পরিবর্তন কার্যত অর্থপাচারবিরোধী প্রয়োগের দক্ষতা কমিয়ে দেবে, যা জনগণের স্বার্থবিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, এটি হবে ‘এক বিশাল প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ’, যার সঙ্গে বাড়তি ব্যয় ও তথ্য-নিরাপত্তার ঝুঁকি জড়িত থাকবে, আর এতে ‘বিদ্যমান বহু মূল্যবান দক্ষতা হারিয়ে যাবে।’ কিছু আইন বিশেষজ্ঞও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিংসলি ন্যাপলি নামের আইন সংস্থার অর্থপাচারবিরোধী বিভাগের পরিচালক ও সাবেক সলিসিটর্স রেগুলেশন অথোরিটির কর্মকর্তা কোলেট বেস্ট বলেন, ‘আইন সেবা খাতের জন্য এফসিএ প্রকৃত তদারকি সংস্থা নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায়, পরিবর্তন কার্যকর হতে কত সময় লাগবে, তাদের নতুন করে এফসিএ অনুমোদন নিতে হবে কি না, আর এ সময়ে অর্থপাচারবিরোধী তদারকি কীভাবে চলবে।’

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসআরএ—এর এক মুখপাত্র বলেন, তারা ‘হতাশ’ যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থপাচারবিরোধী তদারকিতে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ করেছে, তা আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত জটিল এক নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সরল করবে।’ তবে এটি কার্যকর হতে হলে সংসদে অনুমোদন, অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবং একটি বিস্তারিত রূপান্তর ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিবর্তনের সময়সূচি ‘পার্লামেন্টের সময়সূচির ওপর নির্ভরশীল’ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তারা আরও বলেছে, এফসিএ-কে নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হবে এবং নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত তদারকি ক্ষমতা নিয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সিটি মন্ত্রী লুসি রিগবি বলেন, ‘পেশাজীবী সেবাখাতে ২৩টি পৃথক তদারকি সংস্থা থাকার ফলে নজরদারি ও প্রয়োগে অসামঞ্জস্য তৈরি হয় এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জটিল হয়ে ওঠে।’

এফসিএ-র বাজার তদারকি ও প্রয়োগ বিভাগের যৌথ নির্বাহী পরিচালক স্টিভ স্মার্ট বলেন, এই পরিবর্তন ‘পেশাজীবী সেবা খাতের তদারকি সহজ করবে’ এবং ‘আমাদের অপরাধ শনাক্ত ও ব্যাহত করার সক্ষমতা বাড়াবে।’

যুদ্ধজয়ের আশা নেই, ইউক্রেনীয় বাহিনীতে পলাতক-অনুপস্থিত প্রায় ৩ লাখ

ইউরোপের নেতাদের দুর্বল আখ্যা ট্রাম্পের—ইউক্রেনকে সমর্থন কমানোর ইঙ্গিত

ইউরোপে জব্দ করা রুশ সম্পদ ইউক্রেনকে দেওয়ার চুক্তি শিগগির

রুশ দখলের দাবি মিথ্যা—পোকরভস্কে ইউক্রেনের পতাকা উড়িয়ে জানাল সেনারা

লিথুয়ানিয়ার আকাশে বেলারুশের ‘চোরাচালানের বেলুন’, জরুরি অবস্থা জারি

ট্রাম্পের প্রস্তাবে ‘অসন্তুষ্ট’ জেলেনস্কি গেলেন লন্ডনে ইউরোপের নেতাদের কাছে

আইএলটিএসে ‘ফেল’ করেও যুক্তরাজ্যে হাজারো মানুষের অভিবাসন

দুটি সমস্যা সমাধান হলেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের চুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে রাশিয়ার উচ্ছ্বাস

চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত, তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিষয়ে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা