রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আকস্মিক ফোনকলের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার আশা আরও মিইয়ে গেছে ইউক্রেনের। আজ শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে এই ঘটনা কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ক্রেমলিনের শীর্ষ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, পুতিন নিজেই বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে ফোন করেন এবং ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র না দেওয়ার অনুরোধ জানান। ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে এই অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে। এটি পেলে তারা সর্বাধিক দূরপাল্লার আক্রমণ ক্ষমতা অর্জন করবে এবং সরাসরি মস্কোতে হামলা চালাতে সক্ষম হবে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল দুই নেতার অষ্টম ফোনালাপ। অতীতেও দেখা গেছে, ট্রাম্প যখন কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখাতেন, পুতিনের ফোন আসার পর হঠাৎ করে ট্রাম্পের অবস্থান নরম হয়ে যেত।
গত কয়েক সপ্তাহে পুতিনের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে ইউক্রেনকে টমাহক দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের আলাপের পর তিনি পিছু হটেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার জন্যও টমাহক দরকার। আমাদের কাছে অনেক আছে, কিন্তু সেগুলো দেশের জন্য দরকার। আমি জানি না, এ ব্যাপারে কী করা যায়।’
পুতিনের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার প্রতিপক্ষকে যদি কয়েক হাজার টমাহক দিই, তাতে আপত্তি আছে? আমি হালকাভাবে বলেছিলাম, কিন্তু ও বিষয়টা পছন্দ করেনি।’
ট্রাম্প আরও জানান, শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি পুতিনের সঙ্গে হওয়া কথোপকথন নিয়ে আলোচনা করবেন। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা দেন, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে এক বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার দিন-তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ বা তার পরেই এই বৈঠক হতে পারে। পুতিন এরই মধ্যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে বৈঠকটি নিয়ে কথা বলেছেন। অরবান এক্সে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শান্তি সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে।
তবে পুতিন কীভাবে হাঙ্গেরি পৌঁছাবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা, আকাশপথে বিধিনিষেধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে তাঁর যাত্রা জটিল হয়ে উঠেছে। হাঙ্গেরি আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় আইনগতভাবে পুতিনকে গ্রেপ্তার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও অরবান বলেছেন, তা হবে না।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো শুক্রবার বলেন, ‘পুতিন কোনো সমস্যা ছাড়াই হাঙ্গেরিতে আসতে ও যেতে পারবেন। আমরা তাঁকে সম্মান জানিয়ে স্বাগত জানাব।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। আসন্ন বুদাপেস্ট সম্মেলনের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক হওয়ার কথা।
এই ফোনালাপ কার্যত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ট্রাম্পের কাছে সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনাকে দুর্বল করে দিয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে জন ফোরম্যান বলেন, ‘জেলেনস্কি হয়তো এখন হতাশ। বুদাপেস্ট সম্মেলনের কারণে আজকের বৈঠকটি একেবারে মলিন হয়ে গেল।’
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক না হয়ে পরোক্ষ আলোচনার আয়োজন হতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘ওরা একে অপরকে খুব একটা পছন্দ করে না। তাই হয়তো আলাদা আলাদা করে কিছু করা হবে।’
উশাকভ জানিয়েছেন, ফোনালাপে পুতিন ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন, ইউক্রেনকে টমাহক সরবরাহ করলে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি বদলাবে না, কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের ওপর তা গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন এবং হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের সঙ্গে দেখা করেছেন। যদিও ফোনালাপ নিয়ে তিনি এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা অবশ্য বলেন, টমাহক নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই পুতিনকে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করা হয়েছে। শক্ত অবস্থানই শান্তির গতি তৈরি করতে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত পুতিনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ থামানোর বা লক্ষ্য কমানোর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প আশাবাদী ভাষায় শান্তির কথা বললেও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, এখনো রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কোনো সমঝোতার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
নিউজম্যাক্সকে ভ্যান্স বলেন, ‘উভয় পক্ষের মধ্যে প্রত্যাশার বড় ধরনের অমিল রয়েছে। রাশিয়া আসলে যতটা ভালো করছে বলে ভাবছে, বাস্তবে তা নয়।’