হোম > বিশ্ব > ইউরোপ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা, দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব চেয়েছে রাশিয়া

রাশিয়া আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারে। প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় কোন কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানানো উচিত, সে বিষয়ে রুশ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব জানতে চেয়েছে মস্কো। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুই রুশ ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রুশ কোম্পানিগুলোর ওপর যে বিধিনিষেধ আছে, সেটিই সবচেয়ে ক্ষতিকর।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার বলেছেন, ‘বল এখন রাশিয়ার কোর্টে।’ কারণ, ওয়াশিংটন কিয়েভকে আবারও সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় দেওয়া শুরু করতে রাজি হয়েছে, আর ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা বলেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া যদি আলোচনায় রাজি না হয়, তাহলে দেশটির ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে। রুশ শিল্প খাতের দুটি সূত্র জানিয়েছে, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানিগুলোর কাছে জানতে চাইছে, কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় একটি ফরম বিতরণ করছে, যেখানে ব্যবসায়ীদের বলতে বলা হয়েছে, কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো তাদের ব্যবসাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং সবচেয়ে সংবেদনশীল বিধিনিষেধগুলো কী। রুশ শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

রাশিয়ার বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মী, পরামর্শক, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ এবং উপদেষ্টাসহ মোট ১২ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। তাদের অধিকাংশই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন। তাঁরা রয়টার্সকে বলেছেন, অর্থ প্রদানের সমস্যা সবচেয়ে কষ্টকর। তবে তিনটি সূত্র জ্বালানি খাতের নিষেধাজ্ঞাকেও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছে, বিশেষ করে রাশিয়ার তেলবাহী ট্যাংকার বহরের ওপর বিধিনিষেধ।

একজন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক লেনদেনের খরচ ও তৃতীয় মুদ্রার মাধ্যমে নিষ্পত্তির কারণে সবকিছু অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে বিপজ্জনক, সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হলো ডলারে নিষ্পত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা।’ কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করতে চায় রাশিয়া—এই প্রশ্নের জবাবে গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন বলেছে, তারা সব নিষেধাজ্ঞাকেই অবৈধ মনে করে এবং সবকিছু প্রত্যাহার করা উচিত।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যেখানে বিস্তারিত বিষয়গুলোর আলোচনা চলছে, সেখানে আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই: আমরা আগেভাগে কিছু বলতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার আগে নির্দিষ্ট খাতের নাম ঘোষণা করা অর্থহীন।’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পরপরই বড় রুশ ব্যাংকগুলোকে বৈশ্বিক অর্থ প্রদান নেটওয়ার্ক সুইফট (SWIFT) থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ডলার ও ইউরো বাজারে প্রবেশাধিকার না থাকায়, রুশ কোম্পানিগুলো অন্যান্য মুদ্রা এবং তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হয়েছে।

তিনটি সূত্র বলেছে, ব্যাংকগুলোর ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে তা রাশিয়ার জন্য বিশাল সুবিধা বয়ে আনবে, যদিও একজন মনে করেন, এতটা অনুকূল ফলাফল শিগগিরই আশা করা অবাস্তব। রেনেসাঁ ক্যাপিটালের বিশ্লেষক আন্দ্রে মেলাশচেঙ্কো বলেন, ইউরোপ যে কোনো মার্কিন সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে এমন নিশ্চয়তা নেই।

মেলাশচেঙ্কো বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও তা ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরিয়ে দেবে না বা সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান অবকাঠামো পুনরুদ্ধার করবে না, যার ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে কমিশনভিত্তিক আয়ের পুনরুদ্ধার সীমিতই থাকবে।’

দুটি সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় দেশের কোম্পানিগুলোর ওপর দেওয়া গৌণ নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ কমানোর সম্ভাবনাই বাস্তবসম্মত। চীনা কিছু ব্যাংক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না, ফলে অর্থ প্রদানে জটিলতা তৈরি হচ্ছে এবং নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।

একজন বলেছেন, ‘বিকল্প উপায়গুলো ব্যয়বহুল ও ধীর গতির। চীন বা আমিরাত থেকে আমরা যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আনতে পারি, কিন্তু কীভাবে অর্থ পরিশোধ করব?’ আরেকজন বলেছেন, ‘চীন গত বছরের আগস্টে নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কঠোর করার পর আমাদের ব্যবসা সত্যিকার অর্থেই কান্না করেছিল।’

এই ব্যক্তি জানিয়েছেন, রাশিয়ার ব্যবসার জন্য বড় সমস্যা হলো, ইতিমধ্যে সরবরাহ করা পণ্যের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না।

গৌণ নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শিথিল করা হলে রাশিয়ার বিকল্প অর্থ প্রদানের মাধ্যম ‘মির’ কার্ড গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সার্বভৌম সম্পদ জব্দ করেছে, যার বেশির ভাগ ইউরোপে সংরক্ষিত। মার্কো রুবিও বুধবার বলেছেন, ‘ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে থাকবে, আর জব্দকৃত সম্পদের কী হবে তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

শিল্প খাতের একটি সূত্র জানিয়েছে, বরফাচ্ছন্ন সাগরে চলতে সক্ষম এমন জ্বালানিবাহী ট্যাংকার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি মূলত নিষেধাজ্ঞাজনিত কারণে অর্থ প্রদানের সমস্যার আরও একটি প্রতিফলন। আপর একটি সূত্র বলেছে, ‘জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার ছায়া বহরের জাহাজ, বড় তেল অনুসন্ধান কোম্পানি ও তেল ব্যবসার নেটওয়ার্কের ওপর দেওয়া হয়েছিল, তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ছিল।’

তবে সবাই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের আশা করছে না। রাশিয়ার বৃহত্তম ব্যাংক সবারব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জার্মান গ্রেফ বলেছেন, তাঁর ব্যাংক ধরে নিয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞা হয়তো আরও কঠোর হবে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নোভাটেকের বোর্ডের উপপ্রধান এদুয়ার্দ গুদকভ গত মাসে বলেছিলেন, ‘কেউ যেন এটা না ভাবে যে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কমলে আমাদের পরিস্থিতিও সহজ হয়ে যাবে।’

পুরো ইউক্রেন দখলের পরিকল্পনা বাদ দেননি পুতিন: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন

৪০০ বছরের ঐতিহ্যে ইতি, আর চিঠি বিলি করবে না ডেনমার্কের পোস্ট অফিস

গ্রিস উপকূলে মাছধরা নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫৪০ অভিবাসী উদ্ধার

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে রুশ জাহাজে আঘাত হানল ইউক্রেন

শান্তিতে মাচাদোর নোবেল পাওয়ার বিরুদ্ধে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মামলা

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

চেলসি ক্লাব বিক্রির অর্থ ইউক্রেনকে দিতে হবে—রুশ ধনকুবেরকে ব্রিটিশ আলটিমেটাম