ইউরোপজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে তীব্র দাবদাহ। তাপপ্রবাহে এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল ও বলকান এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এসব এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। প্রচণ্ড গরমে মহাদেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে অনেকগুলো দাবানলও।
স্পেনের আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক করেছে, দেশটির সিভিলি ও করডোবা এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। পর্তুগালের দক্ষিণাঞ্চলেও তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে জানানো হয়েছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু হয়েছে দাবানল। স্পেনে দাবানলের আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। মাদ্রিসের কাছে ত্রেস কান্তোস এলাকার বাসিন্দা তিনি। সেখানে দাবানলের আগুন লোকালয়ে পৌঁছে গেছে বলে জানানো হয়েছে। ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে উষ্ণ বাতাস বইছে, যা আরও উসকে দিচ্ছে দাবানলকে। অঞ্চলটির কয়েক হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ দাবানলের মধ্যে রয়েছি। সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ৩০টি সক্রিয় দাবানল জ্বলছে। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত প্রাচীন স্বর্ণখনি ‘লাস মেদুলাস’ ভস্ম হয়ে যেতে পারে দাবানলে। কাস্তিল ও লিয়ন এলাকা থেকে প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্র আন্দালুসিয়ার হোটেল ও আবাসিক বাড়ি-ঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও ২ হাজার মানুষকে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ১ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর জরুরি ইউনিট।
পর্তুগালেও বড়সড় তিনটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগুন নেভাতে ১৪টি এয়ারক্রাফট নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফায়ার সার্ভিস কর্মী। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতই বেশি যে বিকল হয়ে পড়েছে দেশটির ওয়াটার বোম্বার। সহায়তায় এগিয়ে এসেছে মরক্কো। দেশটিতে পর্তুগালে দুটি উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ইতালিতেও তীব্র গরমে এক শিশু মারা গেছে। রোম, মিলান, ফ্লোরেন্সসহ দেশটির অন্তত ১০টি শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
গ্রিসেও দেড় শতাধিক স্থান দাবানলে পুড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। তীব্র শুষ্ক বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। দেশজুড়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৫ হাজার কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে কাজ। পর্যটন দ্বীপ জাকিন্থস থেকে সব মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আগুনে পুড়েছে বহু বাড়ি-ঘর, যানবাহন।
বড়সড় বেশ কয়েকটি দাবানল হয়েছে তুরস্কেও। তবে, সবকটিই এখন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বলে জানানো হয়েছে। আলবানিয়াতেও দাবানলের ভয়াবহতায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে বহু মানুষ।
এদিকে, তীব্র গরমে গতকাল মঙ্গলবার, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বিস্ফোরিত হয়েছে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার। দুই অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৭ একর জমি পুড়েছে। তবে, কোনো হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যায়নি।