ইউক্রেন সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। বহিঃশক্তি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এবার গৃহযুদ্ধেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ইউক্রেনে। শনিবার সকালে দেশটির রাশিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলের দনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই সেনার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের সংঘাত শুরুর আগেই গতকাল শুক্রবার বিদ্রোহীরা সেখানকার কয়েক লাখ রুশভাষী নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পরপরই ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দনেৎস্ক ও লুহানস্কে অভিযান চালানোর আগেই সেখানকার নাগরিকেরা রাশিয়ায় যেতে আরম্ভ করেন।
বিদ্রোহীরা ওই এলাকার নারী-শিশুদের রাশিয়ায় পাঠিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। তারা ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পূর্ণ সমরসজ্জা নিয়ে রেখেছে তারা। ইউক্রেন সরকারের যে কোনো হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুত। স্বঘোষিত স্বাধীন দনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের প্রধান ডেনিস পুশিলিন এক ভিডিও বার্তায় এই প্রস্তুতির কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ বিষয়ের প্রতিক্রিয়ায় বিদ্রোহী দমন কিংবা আসন্ন আক্রমণ প্রতিহত করতে ইউক্রেন তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না।
রাশিয়ার এমন আশ্বাসে যুক্তরাষ্ট্র যে আশ্বস্ত হতে পারছে না তা বোঝা যায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বক্তব্য থেকে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলো হয়েছে, কমলা হ্যারিস হুমকি দিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ‘নজিরবিহীন’ অবরোধ আরোপ কর বে। তবে কমলার এই বক্তব্যের একদিন আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্ব যে কোনো মূল্যে রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করতে চায়। ফলে, রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের এ ধরনের সম্ভাব্য উদ্যোগের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
ইউক্রেন সংকটের এই উত্তাপ কেবল ইউরোপেই নয়, এসে পড়েছে এশিয়াতেও। চীনও জড়িয়ে পড়েছে এতে। ইউক্রেন সংকটে চীনের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে পশ্চিমারা। তারা বলছে, চীন-রাশিয়া মিলে বিদ্যমান বৈশ্বিক আইনকানুন প্রতিস্থাপন করতে ‘নতুন বৈশ্বিক কানুন’ তৈরি করছে। শনিবার ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে এ কথা বলেছেন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে এ উত্তেজনায় নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলেছে রুশ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ার ঘোষণা। শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই মহড়ার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা যে সংকট আরও ঘনীভূত করবে তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আশার আলো হয়তো খানিকটা এখনো জিইয়ে রয়েছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চলতি সপ্তাহেই ইউরোপে বৈঠক করবেন। তবে সেই বৈঠকের দিন-তারিখ বা স্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি।
এ অবস্থায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-হুমকি যে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করবে তা নিয়ে খুব কম বিশ্লেষকেরই দ্বিমত রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই সংকট উত্তরণের পথে দুয়ার খুলবে তা এখনো অনিশ্চিত।