হংকংয়ের 'গণতন্ত্রের দেবী' খ্যাত গণতন্ত্রপন্থী কর্মী অ্যাগনেস চৌ (২৪) মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় সাত মাস কারাবন্দী রাখার পরে শনিবার (১২ জুন) তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বিতর্কিত 'জাতীয় নিরাপত্তা আইন' এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালে একটি অননুমোদিত সমাবেশে অংশ নেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে আটক করেছিল হংকং পুলিশ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় হংকংয়ের নিউ টেরিটরিজ জেলার তুয়েন মুনের তাই লাম সংশোধন সংস্থা থেকে অ্যাগনেস চৌকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে চীন-শাসিত নগরীর পুলিশ সদর দপ্তরের কাছ থেকে একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া চৌর দীর্ঘকালীন সহকর্মী জোশুয়া ওয়াংয়েকে কারাগারেই রাখা হয়েছে। চৌকে মুক্তি দেওয়া বা জোশুয়াকে মুক্তি না দেওয়ার পরিষ্কার কোন কারণ জানা যায়নি। সংশোধনমূলক পরিষেবা বিভাগের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চৌ মুক্তি পাওয়া অনেক সমর্থক তাই লামে জমায়েত হয়। এ সময় তাঁরা স্থানীয় ভাষায় 'অ্যাগনেস চৌ অ্যাড অয়েল' নামে চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। এ সময় কিছু সমর্থক কালো টি-শার্ট, হলুদ মাস্ক পরিধান করে এবং হলুদ ছাতা নিয়ে এসেছিল, যা ২০১৪ সালের ব্রিটিশ উপনিবেশ বিরোধী বিক্ষোভের প্রতীক।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চৌর মুক্তির খবরে অনেক গণমাধ্যমকর্মী কারাগারে সামনে জমায়েত হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। মুক্তির পর বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী গণতন্ত্রকামীদের নিয়ে গাড়িতে চলে যান। পরে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেন, 'বেদনাদায়ক অর্ধ বছর এবং ২০ দিন, শেষ অবধি মুক্তি।' পোস্টে সাহসিকতার জন্য তিনি বন্ধু ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। সবাইকে সঠিকভাবে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দেন চৌ।
প্রসঙ্গত, হংকং চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আগে অঞ্চলটি যুক্তরাজ্যের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৯৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে হংকংকে চীনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে চীন হংকংয়ের জন্য 'জাতীয় নিরাপত্তা আইন' করে। যার অধীনে চীন হংকংয়ের নাগরিকদের অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা পায়। বিধানে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রাখা হয়। তবে গণতন্ত্রপন্থীরা মনে করে এই আইনের মাধ্যমে চীন হংকংয়ের নাগরিকদের ওপর অন্যায় বিচারের পথ সৃষ্টি করছে। তাই তাঁরা এ আইনের বিরোধিতা করে; শুরু হয় আন্দোলন। ৭ মাসব্যাপী এ আন্দোলনে চৌসহ শতাধিক গণতন্ত্রকামী লোক গ্রেপ্তার হয়। এ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ায় জাপানি নাগরিকদের টুইট পোস্টে এবং জাপানের গণমাধ্যমে চৌকে অসংখ্যবার হংকংয়ের 'গণতন্ত্রের দেবী' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।