বিদেশে কর্মরত ফিলিপাইনের গৃহকর্মীদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে ম্যানিলা। ন্যূনতম মজুরি ১০০ ডলার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোতে এখন বাজার চাহিদা অনুযায়ী মজুরি নির্ধারিত হবে। কিন্তু অন্যান্য গন্তব্যে ৫০০ ডলারের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর থাকছে বলে জানিয়েছে ফিলিপাইন সরকার।
গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের অভিবাসী কর্মীবিষয়ক দপ্তর (ডিএমডব্লিউ) গত ২২ আগস্ট ঘোষণা করে, ফিলিপিনো গৃহকর্মীদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৪০০ ডলার থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০০ ডলার (প্রায় ২৮ হাজার ৪৮২ ফিলিপিনো পেসো) করা হবে। এই বর্ধিত মজুরি বিশ্বজুড়ে সমস্ত নতুন বা নবায়নকৃত কর্মসংস্থান চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।
ডিপার্টমেন্ট অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্সের মন্ত্রী হ্যান্স লিও ক্যাডাক এই ঘোষণা দিয়ে জানান, এই উদ্যোগ প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের নির্দেশেই করা হয়েছে।
এই মজুরি বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—গৃহকর্মকে একটি ‘সমান মূল্যের পেশা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা; প্রায় ২০ বছর ধরে অপরিবর্তিত থাকা ৪০০ ডলারের ন্যূনতম মজুরির সমস্যার সমাধান করা, যা ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না; ঝুঁকিপূর্ণ ‘ওভারসিজ ফিলিপিনো ওয়ার্কার্স’ (ওএফডব্লিউ) কর্মীদের কল্যাণ, অধিকার ও সুরক্ষা উন্নত করার জন্য প্রণীত আট দফা সংস্কার অ্যাজেন্ডার এটি একটি অংশ এটি; মজুরি বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মীদের পরিবারকে মূল্যস্ফীতির মধ্যে আরও ভালো আর্থিক সহায়তা দেওয়া এবং কর্মীদের উচ্চ মজুরির ভূমিকায় (যেমন কেয়ারগিভার) স্থানান্তরিত হতে উৎসাহিত করা।
তবে প্রাথমিকভাবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমানসহ সব জিসিসি দেশে এই মজুরি বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও উপসাগরীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তির মুখে ম্যানিলা তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
ডিএমডব্লিউ মন্ত্রী ক্যাডাক গত সপ্তাহে কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সামিখ আল মারি ও অন্য জিসিসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দোহায় আলোচনার পর নিশ্চিত করেন, এই দেশগুলোর জন্য ৫০০ ডলারের ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক করা হবে না।
এই পিছু হটার কারণ হিসেবে ক্যাডাক জানান, এই ‘পরিবর্তন’ আনা হয়েছে ‘টেকসই নিয়োগ কাঠামো বজায় রাখতে’ এবং নিয়োগকারী দেশগুলোর সঙ্গে পূর্ব পরামর্শের অভাব ছিল একটি মূল সমস্যা।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম অনুসারে, উপসাগরীয় অঞ্চলে এখন ফিলিপিনো কর্মীদের মজুরি ‘সরবরাহ ও চাহিদা’ নীতির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
জিসিসি দেশগুলো ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য স্থানে (হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, জাপান, মালয়েশিয়া, ইতালি ও কানাডা) গৃহকর্মীদের জন্য ৫০০ ডলারের ন্যূনতম মজুরি বহাল থাকবে। এই দেশগুলোতে নতুন বা নবায়নকৃত চুক্তিতে এই মজুরি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ডিএমডব্লিউ জানিয়েছে, নিয়োগকারী সংস্থা ও নিয়োগকর্তাদের চুক্তি হালনাগাদ করার জন্য ২২ আগস্ট থেকে ৬০ দিনের একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিএমডব্লিউর অভিযোগ ব্যবস্থা (আসিয়ন ফান্ড) ও তদারকির মাধ্যমে চুক্তির নিয়মকানুন কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, ফিলিপাইন সরকারের কাছে গৃহকর্মী পরিসংখ্যানের সুনির্দিষ্ট তথ্য আলাদাভাবে নেই। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধের তথ্য অনুযায়ী, মোট ২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন কর্মী বিদেশে ছিলেন। এর মধ্যে আবার ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশই নারী।