মিয়ানমারের চাউং উ টাউনশিপে ঐতিহ্যবাহী থাডিংগিয়ুত উৎসব পালনের সময় প্যারাগ্লাইডার হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত এবং ৪৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) এক মুখপাত্র।
জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) এক স্থানীয় কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় বৌদ্ধদের ঐতিহ্যবাহী এবং জাতীয় ছুটির দিনে থাডিংগ্যুট উৎসব উপলক্ষে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠান ছিল জান্তা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে এক মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিও। এই উৎসবস্থলে মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার থেকে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমার গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে এই সংঘাতে ৫ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
পিডিএফের ওই কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার সমাবেশ চলাকালে তাঁরা আকাশপথে সম্ভাব্য হামলার খবর পান এবং দ্রুত এই উৎসব শেষ করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এর আগেই প্যারামোটরগুলো চলে আসে।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা এসে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই বোমা ফেলল। প্রথম বোমাটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার হাঁটুর নিচের অংশে আঘাত পাই। আমার পাশেই কয়েকজন মারা যান।’
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণে উৎসবস্থলটি ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। মৃতদেহগুলো শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
অনুষ্ঠানটির একজন নারী আয়োজক এএফপিকে বলেন, ‘শিশুদের দেহ সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।’ ঘটনাস্থল থেকে এখনো দেহের অংশ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানায়, বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার জন্য জান্তা বাহিনীর মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ব্যবহারের ঘটনাটি ‘উদ্বেগজনক নতুন প্রবণতার’ অংশ।
বিবিসির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান ও হেলিকপ্টার-স্বল্পতার কারণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এখন প্যারামোটর ব্যবহার করছে। গত কয়েক বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ কঠিন করে তুলেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, ‘এই হামলাকে একটি ভয়াবহ সতর্কবার্তা হিসেবে নেওয়া উচিত। মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের এখনই জরুরি সুরক্ষা প্রয়োজন।’
জো ফ্রিম্যান দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা জান্তার ওপর চাপ বাড়ায় এবং গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে মিয়ানমারের জনগণের জন্য ব্যর্থ হয়ে আসা তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করে।
মোমবাতি প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া মানুষ জান্তার সামরিক নিয়োগনীতি ও আসন্ন নির্বাচনের প্রতিবাদ জানান। তাঁরা অং সান সু চি ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দির মুক্তিরও দাবি জানান।
মিয়ানমারে আগামী ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ২০২১ সালে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর এটিই হবে প্রথম নির্বাচন। তবে সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না; বরং এটি জান্তাকে দেশটিতে তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ করে দেবে।