নেপালের পর্যটন এলাকা চন্দ্রগিরিতে একটি কেবল কারে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নেপালি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন মার্কেট, নেতাদের বাসভবন এমনকি থানাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
দ্য হিমালয়ানের খবরে বলা হয়েছে, নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চন্দ্রাগিরি পৌরসভায় দুর্নীতি ও চলমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অবরোধের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভে নামে জেনারেশন জেডের তরুণেরা। এ সময় তারা চন্দ্রাগিরি হিলস কেবল কারের নিচের স্টেশনটিতে অগ্নিসংযোগ করে।
শুধু তাই নয়, বিক্ষোভকারীরা সিজি ইলেকট্রনিকস ডিজিটাল পার্ক, বালাম্বু ও থাঙ্কোট থানাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। সোমবারের দেশজুড়ে পুলিশি দমন–পীড়নের পর এই বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ওই অভিযানে ১৯ তরুণ নিহত হয়েছিল।
এদিকে, বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছ—সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত নেপাল এখনো শান্ত হয়নি। ক্ষুব্ধ জনতার হাতে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী। লুটতরাজ, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে দেশজুড়ে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মাঠে নামে সেনাসদস্যরা। গতকাল রাতেই, তাঁরা সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, আইন ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী সবাইকে সতর্ক করে বলে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর তারা। প্রয়োজন হলে কঠোর হতে তারা দ্বিধা করবে না বলেও জানানো হয়।
সম্প্রতি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম নেপালে নিষিদ্ধ করে সরকার। আগে থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল সাধারণ জনগণের। এই ঘোষণা তা আরও উসকে দেয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশটির তরুণ প্রজন্ম—জেন জি। গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মাত্র একদিনেই ওই বিক্ষোভে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সংঘে নিহত হয় ১৯ বিক্ষোভকারী। আর এরপরই মূলত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি।
১৯ প্রাণহানির পর প্রথমে নিজেকে ব্যর্থ স্বীকার করে পদত্যাগ করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর কৃষিমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টসহ বেশ কিছু সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্ত্রীদের বাড়ি-ঘরেও হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। কিন্তু তারপরও ক্ষোভ কমেনি বিক্ষোভকারীদের। একের পর এত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপরও হামলা চালায় তারা। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক হেলিকপ্টারে করে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও পিটিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা।