আফগানিস্তানে টানা ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ রাখার পর তা পুনরায় চালু করেছে তালেবান সরকার। হঠাৎ এই অবরোধে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে জরুরি সেবায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, প্রদেশগুলোতে আবার যোগাযোগব্যবস্থা সচল হচ্ছে। ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, নেটওয়ার্কে আংশিক পুনঃসংযোগের প্রমাণ মিলেছে। তালেবান সরকারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আদেশে ইন্টারনেট পুনরায় চালু করেছেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, এই দুই দিনের অবরোধে ব্যবসায়িক কার্যক্রম, ফ্লাইট, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা—সব ক্ষেত্রেই বিপর্যয় নেমে আসে। বিশেষ করে, নারী ও কিশোরীদের জন্য এটি ছিল বড় ধরনের আশঙ্কার কারণ, যাদের অধিকার ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।
ইন্টারনেট আবারও চালু করার বিষয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ঘুরে আসা এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, মানুষজন খুশি, মোবাইল হাতে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন। নারী, পুরুষ এমনকি তালেবান সদস্যরাও ফোনে কথা বলছেন। শহরে ভিড়ও বেড়েছে।
এদিকে কাতারে অবস্থানরত তালেবানের শীর্ষ মুখপাত্র সুহাইল শাহিন জানান, বুধবার দুপুরের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে এই অবরোধের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি সরকার।
তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে শরিয়া আইনের কঠোর ব্যাখ্যা অনুসারে তারা নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে। আফগান নারীরা দাবি করে আসছেন, ইন্টারনেটই এখন তাঁদের বাইরের দুনিয়ার একমাত্র জানালা। কারণ, ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত করা হয়েছে। এমনকি সেপ্টেম্বরে নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ইন্টারনেট অবরোধ আফগানিস্তানকে কার্যত বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছিল, এটি আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করতে পারে।