বিশ্ব শিশু দিবস
‘শিশুর কথা শুনব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ’—এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়ন সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস।
জাতিসংঘ প্রতিবছর ২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে থাকে। এদিনটি ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকারের ঘোষণাপত্র এবং ১৯৮৯ সালে কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড বা সিআরসি গৃহীত হওয়ার তারিখ হিসেবে চিহ্নিত। শিশু অধিকার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং শিশুদের কল্যাণে কার্যকর পদক্ষেপের ডাক দেওয়াই এ দিবসের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার (এ বছর ৬ অক্টোবর) বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। একই সঙ্গে, শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও বেশি করে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ।
শিশু অধিকার: চ্যালেঞ্জ ও অঙ্গীকার
বাংলাদেশে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর জোর দিয়েছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সব স্তরে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কেবল শিশুদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।
এত গেল সুস্থ শিশুদের কথা। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যতের কথা কি আমরা ভাবছি? নিরাময় অযোগ্য জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের কথা কি আমরা ভাবছি? প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ পরিচালিত, ‘মমতাময় কড়াইল’ প্রকল্পের অধীনে এ ধরনের কিছু নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত শিশু রোগী নিবন্ধিত আছে। এ প্রকল্পেই ‘আনন্দ’ নামে একটি প্রোগ্রাম চলে। এই আনন্দ প্রোগ্রাম হলো, এ ধরনের সুবিধা বঞ্চিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ডে কেয়ার, প্রকৃত অর্থে রেস্পাইট কেয়ার। পার্থক্য কেবল একটাই, এ শিশুগুলো প্রান্তিক, জীবনের শেষ মুহূর্তের দিন গুনছে। সুস্থ শিশুদের ভিড়ে তাদের ভুলে যাওয়া আমাদের অন্যায় হবে।
মোটা দাগে বলতে গেলে, বর্তমানে দেশে ৪০ হাজারের বেশি শিশুর প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু এ বিশেষায়িত সেবা শুধু ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কে জানে ভবিষ্যতে আমাদের কারও পরিবারে এ ধরনের একটি শিশু আসবে কি না?
আজকের শিশুই আগামী দিনের ভিত্তি। শিশুর কথা শোনা এবং তাদের জন্য কাজ করা কোনো নির্দিষ্ট দিনের কর্মসূচি নয়; বরং এটি হওয়া উচিত আমাদের নিত্যদিনের অঙ্গীকার। বিশ্ব শিশু দিবস সেই অঙ্গীকার পুনরুজ্জীবিত করার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, সদস্য সচিব ,প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ।