হোম > পরিবেশ

জলবায়ু প্রতিশ্রুতিকে বুড়ো আঙ্গুল: বৃহৎ তেলখনি প্রকল্পে অনুমোদন বাইডেনের

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় নিজের ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বৃহৎ তেল ও গ্যাস খনি খনন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে ৮০০ কোটি ডলারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সোমবার (১৩ মার্চ) প্রকল্পটিতে অনুমোদন দেন বাইডেন।

এ নিয়ে পরিবেশবাদীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া নেই। তথাকথিত এই ‘উইলো’ প্রকল্পের পেছনে রয়েছে কনোকোফিলিপস। তারা দাবি করছে, এটি সম্পূর্ণ স্থানীয় বিনিয়োগ এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে। 

প্রকল্পটি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিশেষ করে টিকটকে তরুণেরা ব্যাপক বিরোধিতা করে আসছেন। তরুণ পরিবেশবাদী কর্মীরা এই প্রকল্পের প্রতিবাদে টিকটকে প্রচুর ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই প্রকল্প জলবায়ু এবং বন্যপ্রাণীর জীবনচক্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এটি অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। 

অথচ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেই স্পষ্ট করে বলা আছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অধীনে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় মার্কিন নেতৃত্ব অপরিহার্য এবং তাদের নেতৃত্ব অব্যাহত রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বকে কার্বন নেট-জিরোতে পৌঁছানোর পথে দেশে এবং বিদেশে পদক্ষেপ বাড়াতে একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিদ্যমান প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য পূরণে এবং সবার জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সকল অংশীজনদের আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন জীবাশ্ম জ্বালানির সন্ধানে বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিতে শুরু করেছে। আলাস্কার প্রত্যন্ত উত্তর ঢালে অবস্থিত ওই খনি এলাকা কয়েক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ তেলের আধার। এখান থেকে প্রতিদিন ১ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন সম্ভব হবে। 

ইউএস ব্যুরো অব ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অনুমান অনুসারে, তেলক্ষেত্রটি থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত যথেষ্ট তেল উৎপাদন করা যাবে। ফলে এই সময়ের মধ্যে এটি পরিবেশ দূষণে ২৭ কোটি ৮০ লাখ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের সমান ভূমিকা রাখবে। এই পরিমাণ প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের সড়কে ২০ লাখ নতুন গাড়ি যুক্ত হওয়ার সমতুল্য। 

বাইডেন প্রশাসন আলাস্কা এবং আর্কটিক মহাসাগরের ১ কোটি ৬০ লাখ একর এলাকায় তেল ও গ্যাস খননের ওপর সীমা আরোপ করার একদিন পরেই সোমবার (১৩ মার্চ) এই অনুমোদন এল। ফলে উইলো প্রকল্প বিরোধী কর্মীদের সঙ্গে একপ্রকার আপস করার এক দিন পরেই নিজের অবস্থান থেকে সরে গেলেন বাইডেন। 

পরিবেশবাদীরা বলছেন, উইলো প্রকল্পের অনুমোদন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ু প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। 

এই প্রকল্পের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসে ১০ লাখের বেশি চিঠি গেছে। উইলো প্রকল্পের অনুমোদন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চেঞ্জ ডটঅর্গে একটি পিটিশনে ৩০ লাখের বেশি স্বাক্ষর সংগৃহীত হয়েছে। 

পরিবেশ বিষয়ক দাতব্য সংস্থা সিয়েরা ক্লাব বলেছে, ‘এটি ভুল পদক্ষেপ এবং এটি বন্যপ্রাণী, ভূমি, স্থানীয় বাসিন্দা এবং আমাদের জলবায়ুর জন্য একটি বিপর্যয় হবে।’ 

আলাস্কার একজন তরুণ পরিবেশ কর্মী সনি আহক শুরু থেকেই উইলোর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্প ‘আর্কটিকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের’ জন্য আগামী ৩০ বছরের জন্য দখল করে রাখবে। সেই সঙ্গে আর্কটিকে তেল খননের সম্ভাবনা ও সুযোগ সম্প্রসারণে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। 

কিন্তু কংগ্রেসে আলাস্কার প্রতিনিধিত্বকারী তিনজন আইনপ্রণেতা, যাদের মধ্যে একজন ডেমোক্র্যাটও রয়েছেন, তাঁরা প্রকল্পটির অনুমোদনের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এটিকে এই অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি, এটি দেশীয় জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদেশি তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। 

কনোকোফিলিপসের সিইও রায়ান ল্যান্স সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আলাস্কা এবং আমাদের পুরো জাতির জন্য এটি খুবই সঠিক সিদ্ধান্ত।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই জ্বালানি তেল জায়ান্ট এরই মধ্যে আলাস্কার বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা এখন আলাস্কায় আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের লোভও দেখাচ্ছে। 

তাহলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন, যিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু করেছেন, তিনি এমন একটি ‘কার্বন বোমা’ প্রকল্পের অনুমোদন দিলেন কেন? 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, উইলো প্রকল্পের পেছনে রয়েছে রাজনীতি এবং আইন। এটি পরিবেশের কোনো ব্যাপার নয়। 

 ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার সময় জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কোনো জমিতে আর তেল–গ্যাস খনন হবে না।

অন্তত তাঁর আমলে এটি তিনি হতে দেবেন না। সেই প্রতিশ্রুতি অবশ্য গত বছরই ভেঙেছেন তিনি। তাঁর প্রশাসন আদালতের চাপে খননের জন্য ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। 

এই উইলো প্রকল্পের ব্যাপারেও হোয়াইট হাউস সম্ভবত আদালতের ভূমিকাকেই উল্লেখ করে দায় এড়াতে পারবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। 

তেল কোম্পানি কনোকোফিলিপস ১৯৯৯ সাল থেকেই সরকারি খনি খননের ইজারা ধরে রেখেছে। তাদের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করা হলে আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। 

এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, জলবায়ু রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে উইলো প্রকল্প যে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না, বাইডেন প্রশাসন এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই সচেতন। সুতরাং, বিরোধীদের সুযোগ না দিতে, বাইডেন প্রশাসন আর্কটিক মহাসাগরে তেল এবং গ্যাস কূপ ইজারা দেওয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে উইলো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। 

অবশ্য বেশিরভাগ পরিবেশবাদী বাইডেন প্রশাসনের এমন অবস্থানকে ন্যায্য বলে মেনে নিতে পারছেন না। 

অপরদিকে উইলো প্রকল্পও গভীরভাবে রাজনৈতিক। ১৮ মাস পরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলে জো বাইডেনকে মার্কিন নাগরিকদের জন্য গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং জ্বালানির দামের দিকে নজর দিতেই হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সামনে নিজেকে আস্থাভাজন করে তুলতে এক মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে প্রমাণ করা এখন তাঁর জন্য জরুরি। 

কিন্তু এটিও সত্য যে, তেলের খনির অনুমোদন দিয়ে বহু তরুণের মন ভাঙলেন জো বাইডেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পেছনে এই তরুণ ভোটারদের অবদান কিন্তু কম না!

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

শীতে জবুথবু, কুয়াশায় দুর্ঘটনা

বায়ুদূষণ বেড়েছে ঢাকায়, বিপর্যস্ত কায়রো

ঢাকার তাপমাত্রা কমবে

বায়ু দূষণে তৃতীয় স্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা আবারও ১৬ ডিগ্রির ঘরে

সকালে সূর্যের দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কাবুল

পৌষ মাসে নেই শীতের দেখা, বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা