হোম > পরিবেশ

থাইল্যান্ডের এই অরণ্যে বাঘের সংখ্যা যেভাবে ৩ গুণ হলো

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাঘের অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া থেকে বন্য পরিবেশে বিচরণ করা বাঘ হারিয়েই গেছে। সেখানে থাইল্যান্ডের একটি অরণ্য অঞ্চল একেবারেই ব্যতিক্রম। ওয়েস্টার্ন ফরেস্ট কমপ্লেক্স (ওয়েফকম) নামের ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই এলাকায় ১৬ বছরে বাঘের সংখ্যা তিন গুণ হয়ে গেছে। ২০০৭ সালে যেখানে ছিল ৪১টি, ২০২৩ সালের জরিপে তা বেড়ে হয়েছে ১৪৩।

ওয়েফকমের মধ্যে আছে ১১টি জাতীয় উদ্যান ও ছয়টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এই অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির অসাধারণ এই তথ্য জানা যায়, থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব ন্যাশনাল পার্কস (ডিএনপি) এবং ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) মিলিত এক সমীক্ষায়। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল গ্লোবাল ইকোলজি ও জার্নালে প্রকাশিত হয় সমীক্ষা নিয়ে প্রতিবেদনটি।

বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের পাশাপাশি প্রকাশিত অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এলাকাটির অন্তর্ভুক্ত প্রধান তিনটি সংরক্ষিত এলাকার একটি হুয়াই খা খায়েং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হরিণসহ বিভিন্ন খুরযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। অপর দুটি সংরক্ষিত এলাকা হলো থাং ইয়াই ইস্ট এবং থাং ইয়াই ওয়েস্ট।

ডব্লিউসিএস, থাইল্যান্ডের পরিচালক ও বন্যপ্রাণীবিষয়ক জীববিদ পর্নকমল জর্নবুরম বলেন, এই সংখ্যা বৃদ্ধি বনের আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনাকে প্রতিফলিত করছে। এটি এক দশকেরও বেশি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার ফলাফল।

‘এই অরণ্য এলাকা অনেক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাসস্থান’ বলেন তিনি। জর্নবুরম আশা করেন, ওয়েফকম সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর সংখ্যা পুনরুদ্ধারে একটি অনুকরণীয় মডেল হতে পারে।

ওয়েফকমের সংরক্ষণ প্রকল্পে ২০০৫ সাল থেকে কাজ করা এই নারী জানান, এই অরণ্যের ভূপ্রকৃতিতে নাটকীয় পরিবর্তন দেখেছেন তিনি।

অঞ্চলটির বন্যপ্রাণীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি চোরা শিকার। বন রক্ষায় কাজ করা রেঞ্জারদের টহল ও নজরদারির মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ২০০৫ সালে এমন টহল সংখ্যায় সীমিত এবং সুবিন্যস্ত ছিল না বলে জানান জর্নবুরম। 

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা বাঘ সংরক্ষণ করব, এটি আরও নানা প্রজাতি সংরক্ষণে সাহায্য করে। শুধু তাদের শিকার নয়, আবাসস্থলও এর মধ্যে পড়ে।’

ডব্লিওসিএসের দেওয়া তথ্য বলছে, ওয়েফকম শুধু থাইল্যান্ড নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূলভূমির সবচেয়ে বড় অরণ্যাঞ্চল। এটি কেবল বাঘের বসবাসের এলাকা নয়। বুনো হাতি, ধনেশ, বান্টেংসহ (এক ধরনের বন গরু) ১৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪৯০ প্রজাতির পাখি এবং ৯০ প্রজাতির সরীসৃপের বাস এখানে। 

এসব তথ্য জানা যায়, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।

বেশির ভাগ বাঘ সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় ছোট, বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো রক্ষা করায় দৃষ্টি দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়েফকম বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বন করিডরের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষিত এলাকাকে সংযুক্ত করেছে। বাঘের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি বাঘের বিচরণের এলাকা ৩০০ বর্গকিলোমিটার বা ১১৫ বর্গমাইল পর্যন্ত হতে পারে।

নতুন গবেষণায় ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬৭টি বাঘ শাবকের ছবির সন্ধান মিলেছে। এটি প্রমাণ করে এখানকার বাঘেরা বংশবিস্তার করছে এবং সংখ্যায় বাড়ছে।

জর্নবুরম জানান, ডিএনপি ডব্লিউসিএসের সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সংরক্ষণব্যবস্থা গড়তে ও শক্তিশালী করতে কাজ করছে। 

টহল দলগুলো বিভিন্ন জায়গার অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে জিপিএস ব্যবহার করা শুরু হয়। তথ্য সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করায় টহল পথ, বন্যপ্রাণী বিচরণ এবং অবৈধ কার্যকলাপের স্থানগুলো শনাক্ত করা সহজ হয়।

২০০৭ সালে গবেষকেরা ক্যামেরা ট্র্যাপ বসানো শুরু করেন অরণ্য এলাকায়। এতে পাওয়া ফলাফল একটি তথ্যের ভান্ডার হিসেবে কাজ করছে এবং বর্তমান গবেষণায় তিনটি প্রধান সংরক্ষিত এলাকায় বাঘের সংখ্যা যাচাইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। 

এখানে বলে রাখা ভালো, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে যেমন মানুষ শনাক্ত করা সম্ভব, তেমনি প্রতিটি বাঘকে তাদের অনন্য ডোরা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা যায়।

থাইল্যান্ডের এই সাফল্য আশা জাগালেও গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বাঘের বিচরণ থাকলেও বিশ শতকে সিঙ্গাপুর, জাভা ও বালি থেকে হারিয়ে গেছে বাঘ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুনো বাঘ হারিয়ে গেছে ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়ার অরণ্য থেকে।

ফলে এখন বিচ্ছিন্নভাবে বাঘের ছোট ছোট বসতি আছে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে সম্প্রতি কয়েকটি বাঘের মৃত্যু মালয়েশিয়ার বাঘেদের নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে।

ডিএনপির সবচেয়ে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডে বুনো বাঘের বর্তমান সংখ্যা ১৭৯ থেকে ২২৩। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪৮ থেকে ১৮৯।

জর্নবুরম আশাবাদী যে টহল ও তহবিলের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হলে ওয়েফকম এলাকার বাঘের জনসংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি অন্যান্য জাতীয় উদ্যানেও তাদের বাঘের সংখ্যা বাঁচাতে মডেলটি গ্রহণ করবে।

‘আমি মনে করি, এটি অন্যান্য সংরক্ষিত এলাকার জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক মডেল। শুধু থাইল্যান্ডে নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও এটি কাজে লাগাতে পারে।’ বলেন তিনি।

শীতের প্রকোপ বাড়ছে: ৭ জেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে কত দিন

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

শীতে জবুথবু, কুয়াশায় দুর্ঘটনা

বায়ুদূষণ বেড়েছে ঢাকায়, বিপর্যস্ত কায়রো

ঢাকার তাপমাত্রা কমবে

বায়ু দূষণে তৃতীয় স্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা আবারও ১৬ ডিগ্রির ঘরে

সকালে সূর্যের দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কাবুল