হোম > পরিবেশ

১৫ বছরে দখলে বন্ধ বুড়িগঙ্গার ১৬ কিমির প্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারে অভিযানে গত দুই দশকে রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। অথচ দৃশ্যমান কোনো সুফল আসেনি। এর মধ্যে গত ১৫ বছরে দখলের কারণে নদীটির ১৬ কিলোমিটার অংশে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

ভরাটের কারণে বুড়িগঙ্গার অববাহিকায় নিম্নভূমি ব্যাপক বেড়েছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সবুজ অঞ্চল ও জলাভূমি। বর্ষা ও শরৎকাল ছাড়া বাকি চার ঋতুতে বুড়িগঙ্গার পানিতে জীব বা অণুজীবের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম/লিটার দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে না। এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে ‘বুড়িগঙ্গা: নিরুদ্ধ নদী পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক গবেষণায়। গবেষণার তথ্য বলছে, ভরাটের কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকায় নিম্নভূমি ১৯৯০ সালের ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়। ১৯৯০ সালে ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ সবুজ অঞ্চল থাকলেও ২০২০ সালে কমে হয় ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ১৯৯০ সালে জলাভূমি ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ২০২০ সালে হয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। 

গবেষণায় বুড়িগঙ্গাসম্পর্কিত আটটি প্রকল্প পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সরাসরি বা আংশিকভাবে বুড়িগঙ্গাবিষয়ক এসব প্রকল্পে গত দুই দশকে অন্তত ৩ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু নদী পুনরুদ্ধারে এর প্রভাব দৃশ্যমান নয়।

গবেষণা কার্যক্রমটি ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। গবেষণায় যুক্ত ছিল দৃক পিকচার লাইব্রেরি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি, ক্যাপস, রিভারাইন পিপল, বেলা, দ্য ডেইলি স্টার ও পিপিআরসি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক ও রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ২০০৫ সালে বুড়িগঙ্গার দৈর্ঘ্য উল্লেখ করেছে ৪৫ কিলোমিটার।

একই সংস্থা ২০১১ সালে নদীটির দৈর্ঘ্য উল্লেখ করে ২৯ কিলোমিটার। এই গবেষণায় বুড়িগঙ্গার প্রকৃত দৈর্ঘ্য পাওয়া গেছে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৫ কিলোমিটার প্রবহমান পাওয়া গেছে। ওয়াশপুর থেকে হযরতপুর পর্যন্ত বাকি ১৬ কিলোমিটারে নদী দখলের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িগঙ্গার প্রকৃত উৎসমুখ, প্রকৃত দৈর্ঘ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। যেমন পাউবো নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯ কিলোমিটার, বিআইডব্লিউটিএ ৪৫ কিলোমিটার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২৯ কিলোমিটার, পর্যটন করপোরেশন ২৭ কিলোমিটার উল্লেখ করেছে। এই গবেষণায় জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার প্রকৃত দৈর্ঘ্য নিরূপণ করা গেছে। দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে ধলেশ্বরীর উৎপত্তিস্থল থেকে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের জাজিরার কাছ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার। এই দৈর্ঘ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলিতে উল্লিখিত দৈর্ঘ্যের সমান। ওয়াশপুর থেকে হযরতপুর পর্যন্ত ভরাট, দখল ও প্রবাহশূন্যতার শিকার বুড়িগঙ্গার অন্তত ১৬ কিলোমিটার প্রবাহপথ পাউবো, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনসহ সরকারি সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ ভুলে গিয়েছিল।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্ষাকালে সদরঘাটে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম/লিটার অক্সিজেন পাওয়া গেছে। গ্রীষ্মকালে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৩-এর নিচে, শীত ও বসন্তে ২-এর নিচে এবং হেমন্তে ১-এর নিচে নেমে আসে। গবেষণায় নদীর দুই তীরে ১০০টি ড্রেন এবং দুই তীর ঘেঁষে কারখানা, ইটভাটাসহ ২৫০টি স্থাপনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার প্রবহমান অংশের দুই পাশে শুধু সীমান্তখুঁটি রয়েছে। ভরাট, দখল ও শুকনো অংশে খুঁটি নেই। ১ হাজার ৯২টি খুঁটি পাওয়া গেলেও সেগুলোর মাত্র ২৬০টি যথাযথ রয়েছে। ৭১৮টি খুঁটি ভাঙা এবং ১১৪টির অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।  

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলম, আলোচক ছিলেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ। ভিডিও বার্তায় পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখনই আমরা নদী আন্দোলন করি, তখনই সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়। বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে এত প্রকল্প রয়েছে; তারপরও আমরা আগের অবস্থায় ফিরতে দেখলাম না।’

বায়ুদূষণ বেড়েছে ঢাকায়, বিপর্যস্ত কায়রো

ঢাকার তাপমাত্রা কমবে

বায়ু দূষণে তৃতীয় স্থানে ঢাকা, শীর্ষে দিল্লি

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা আবারও ১৬ ডিগ্রির ঘরে

সকালে সূর্যের দেখা নেই, কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ

ঢাকায় বেড়েছে বায়ুদূষণ, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কাবুল

পৌষ মাসে নেই শীতের দেখা, বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, আজও দূষণে শীর্ষে দিল্লি