ঘূর্ণিঝড় মোখা তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখায়। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এরই মধ্যে ৪ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপথ নিয়ে যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এটি ১৪ মে রোববার প্রথম প্রহরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল টিমের পাশাপাশি উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে
ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে এবং পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। সবাই ব্যক্তিগতভাবে এই সতর্কতাগুলো মেনে চলছে, অনেক ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়:
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেখে আতঙ্কিত হবেন না। মূল ধারার নিউজ পোর্টাল, টিভি অথবা এফএম রেডিওর খবর শুনুন।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। ডায়রিয়া, জ্বরের জন্য স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে রাখুন। সম্ভব হলে ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখুন।
- রেলিংয়ের ওপর ফুলের টব, কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখুন। যাতে ওপর থেকে নিচে পড়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়। খোলা জায়গায় কনস্ট্রাকশনের জিনিস রাখবেন না। বাসার পাশে নির্মাণাধীন ভবন থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- চার্জার লাইট, টর্চ লাইট ও পাওয়ার ব্যাংকে চার্জ ফুল রাখুন। ফ্লোরে মাল্টিপ্লাগ রাখবেন না। কারণ পানি উঠলে বিপদ ঘটতে পারে।
- বাসা টিনশেড বা নিচতলায় হলে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পানিরোধক বাক্সে টেপ এবং পলিথিন পেঁচিয়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন।
- বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় চুলার আগুন নিভিয়ে যাবেন।
- অতিপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন—ডাল, চাল, দেশলাই, শুকনা কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার সংগ্রহে রাখুন।
- নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের মেইন সুইচ বন্ধ রাখলে ভালো হয়।
- ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা সম্পর্কে নিজে খোঁজ রাখুন এবং অন্যকে সচেতন করুন।
- নিজে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবেন এবং অন্যকে যেতে উদ্বুদ্ধ করুন।
- গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচু স্থানে রাখুন। কোনো অবস্থায়ই গোয়ালঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন। তারা নিজেরাই বাঁচার চেষ্টা করবে।
- ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে, যাতে ময়লা বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় করণীয়
- রাস্তায় থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়ে গেলে কাছাকাছি শপিং মল, মসজিদ, স্কুল বা যেকোনো পাকা ভবনে আশ্রয় নিন। কোনোভাবেই খোলা আকাশের নিচে থাকা যাবে না।
- জ্যামে পড়লে গাড়ির পাশে জায়গা রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন যেন বিপদের মুহূর্তে সহজে দরজা খুলে বেরোতে পারেন।
- বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মেইন লাইন অফ রাখুন।
- দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন যাতে বাইরে থেকে ময়লা বা ভারী কিছু উড়ে এসে আঘাত করতে না পারে।
- টিনশেড বাসা বা নিচু জায়গায় বাড়ি হলে যদি নিরাপদ মনে না হয়, নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিন।
- খবরের জন্য ফেসবুক বা ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি না করে ফোনে রেডিও শুনুন। কারণ ডেটা কানেকশন চালু রাখলে দ্রুত ব্যাটারি ফুরাবে, নেটওয়ার্কও বেশি ব্যস্ত থাকবে।
- কোনোভাবেই ট্যাপের পানি সরাসরি পান করবেন না। ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করুন।
- খুব বেশি জরুরি না হলে রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। কেননা গাছ বা বিদ্যুতের পিলার উপড়ে পড়তে পারে বা ভারী কিছু তীব্র গতিতে উড়ে এসে আঘাত করার মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়া এ সময় প্রচুর বজ্রপাতও হয়। আবার বৈদ্যুতিক শক খাওয়ারও ভয় আছে।
- সংকেত অনুযায়ী জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করুন।
- আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে সাধ্যমতো সহায়তা করুন। এ কারণে সবারই প্রাথমিক চিকিৎসার ধারণা থাকা উচিত।
- ফোনে কথা বলে নেটওয়ার্ক ব্যস্ত না রেখে এসএমএসের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করুন।
- উদ্ধারকাজে সহায়তা করুন।
ঘূর্ণিঝড়ের পরে করণীয়
- ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে এমন কোনো বাড়িতে আশ্রয় নেবেন না।
- ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে হাত দেবেন না।
- ক্ষতিগ্রস্তদের সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা দিন।
- আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিন।
- রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে।
- আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন। সাধ্যমতো মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন।
- খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে কেউ আটকে পড়েছেন কি না খুঁজে দেখুন।
- ত্রাণের আশায় বসে না থেকে নিজেই উদ্যোগ নিন। অন্যদের সহযোগিতা নিন।
- ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা বেশি থাকে।
- পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন।
- নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের আলাদা করে যত্ন নিন, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা করুন সবার আগে।
- দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসবজির মতো ফসল চাষের উদ্যোগ নিন। যাতে খুব কম সময়ের মধ্যে খাবারের সংকট কেটে যায়।