সাহিত্য থেকে গল্প নিয়ে সিনেমা–সিরিজ বানানোর রীতি বেশ পুরনো। বাংলাদেশেও গত কয়েক বছরে এই প্রবণতার জোর চর্চা শুরু হয়েছে। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের উপন্যাস থেকে গল্প নিয়ে গত বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভ বানায় ‘কন্ট্রাক্ট’ ওয়েব সিরিজ। তারকা অভিনেতাদের ছড়াছড়ি থাকলেও সমালোচনার মুখে পড়ে সিরিজটি। ওয়েব সিরিজটিকে অনেকে ‘একটি দারুণ সম্ভাবনাময় গল্পের হতাশাজনক চিত্রায়ণ’ বলে অভিহিত করেন।
একই লেখকের আরেকটি উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ অবলম্বনে ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন কলকাতার আলোচিত নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। থ্রিলার ঘরানার উপন্যাসটি বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সৃজিত মুখার্জি উপন্যাসটি নিয়ে ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছেন, আর তাতে অভিনয় করছেন আজমেরী হক বাঁধন—এ খবরে দর্শকদের মধ্যে বেশ উত্তেজনা ছিল শুরু থেকেই।
মূল উপন্যাসে গল্পটি বেশ টানটান আর মার্ডার মিস্ট্রি হলেও ওয়েব সিরিজে গল্পটি বদলে রূপ নিয়েছে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই টানটান থ্রিলার দেখতে বসা দর্শকেরা হতাশ হয়েছেন। মুল গল্পে মুশকান জুবেরি নামের চরিত্রটিকে একজন পুলিশ অফিসারের চোখে অপরাধী ধরা হলেও গল্প বলার ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা এবং মুশকান জুবেরি দুজনকেই সমান্তরালভাবে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ওয়েব সিরিজে গল্পটি পুরোপুরি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিরুপম চন্দের চোখে দেখানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মুশকান জুবেরির রহস্যময়তা ও আবেদন—দুটোতেই ঘাটতি পড়ে গেছে। এ রকম বিভিন্ন নিরীক্ষার কারণে দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আলোর ব্যাপারটা ভালো হলেও মাঝেমধ্যে সংলাপের সাউন্ডে বেশ সমস্যা দেখা গেছে। আগেই বলে রাখা দরকার, ওয়েব সিরিজে অনেক জায়গায়ই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিল দুর্দান্ত। আলোর মতো এটিও আবহ তৈরিতে বেশ সাহায্য করেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী চরিত্র আতর আলী, অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, তার সংলাপ বোঝার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
নামের কারণেই হোক, কিংবা অন্য কারণেই হোক পুরো ওয়েব সিরিজে রবীন্দ্র আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মূল চরিত্র মুশকান জুবেরির মুখে রবীন্দ্রসংগীত বসাতে গিয়ে, ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়াটা একটু অদ্ভুত ঠেকেছে। তবে সত্যিই আবহ তৈরির বাইরেও চরিত্রের নিজস্ব ভাবনাকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে গানগুলো কাজে দিয়েছে। যেমনটা আমরা দেখি, মুশকান জুবেরির সঙ্গে প্রশাসনের অনেকের সম্পর্ক। মুশকানকে তারা কামুক চোখে দেখেন। কিন্তু মুশকান তাদেরকে কেমন চোখে দেখেন? এর উত্তর পাওয়া গেছে এক শটেই। সুন্দরপুর থানার বড় কর্মকর্তা যখন মুশকান জুবেরিকে ফোন দেন, তার ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কলারের নাম, ‘আহাম্মক-২’।