মাহমুদ হাসান রায়হান। দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে তাঁর বাস। সেখানকার সরকারি কলেজে পড়ছেন হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট্ট একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকানে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু সেটা তাঁর পরিচিতির কারণ নয়। বরং তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়ভাবে সেবামূলক কাজ করে।
রায়হান ‘পটুয়াখালীবাসী’ যুব সংগঠন নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। সে সংগঠনের ব্যানারে তিনি কখনো চলে যান বানভাসি মানুষের পাশে, কখনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তাঁর ভালোবাসায় ঈদের পোশাকে দুস্থ শিশু হাসে, অসহায় মানুষও ফুটপাতে ইফতারে বসে। গ্রাম আর শহরে বৃক্ষযোদ্ধা নামেও তাঁকে চেনেন প্রায় সবাই।
২০০৯ সালে পটুয়াখালী আবদুল করিম মৃধা কলেজে রায়হানের এক সহপাঠী জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অর্থাভাবে তাঁর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা করান সহপাঠীর। এরপরে সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন ‘আমাদের বন্ধু সংগঠন’। এই নামেই সব সেবামূলক কার্যক্রম চলছিল। এরপর আরও বড় পরিসরে কাজ করার জন্য তৈরি করেন ‘পটুয়াখালীবাসী’ নামের সংগঠনটি। এর ব্যানারে রোহিঙ্গা শিবির থেকে উত্তরের বানভাসি মানুষের জন্য কাজ করছেন রায়হান। জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী কিংবা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে রায়হান ও তাঁর দল ‘পটুয়াখালীবাসী’ মানবিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
মাহমুদ হাসান রায়হানের এ সংগঠনটি ২ হাজার গরিব শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ৪০০ গরিব শিক্ষার্থীকে স্কুলব্যাগ বিতরণ, গরিব ও দুস্থ পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের জন্য বাছুর, গরু ও ভ্যানগাড়ি বিতরণ করেছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে তালগাছের বীজ রোপণ, রমজান মাসে ১ টাকার ইফতার, মধ্যবিত্তের বাজার ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
মাহমুদ হাসান রায়হান বলেন, ‘আমি ও আমার সংগঠন মানবিক পটুয়াখালী তৈরির চেষ্টা করছি। যত দিন বেঁচে থাকব, সংগঠন নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব। মানুষ তো মানুষের জন্যই।’
মাহমুদ হাসান রায়হান পটুয়াখালী শহরের স্বনির্ভর সড়কের নদীর পার এলাকার মৃত আবু বকর সিদ্দিক মোল্লার ছেলে। এলাকাটিতে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। সে এলাকাতেই রায়হানের বেড়ে ওঠা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রায়হান। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। তাঁর বাবাও একসময় মুদিদোকানদার ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পরে ভাইবোনদের সঙ্গে ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। রায়হান বিবাহিত, তাঁর স্ত্রীর নাম সাবরিনা মেহজাবিন স্বর্ণা।