দুই পা অচল, হাত বাঁকা এবং শারীরিক গঠন ছোট হওয়ার কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না কলেজছাত্র জাকারিয়া। প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়েই এ বছর মাদারীপুরের চরমুগরিয়া মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা, স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করবেন। শুধু কি তাই! ফ্রিল্যান্স করে আয় করছেন এবং এই অর্থ দিয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের কুচিয়ামাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী বাবুল হাওলাদারের চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনজনই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। বাবুল হাওলাদারের (৫০) বড় ছেলে জাকারিয়া হাওলাদার (২০), মেয়ে লাবণ্য আক্তার (১৫) ও ছোট ছেলে জিহাদ হাওলাদার (১৩) প্রতিবন্ধী। বাবা খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারলেও তিন সন্তান হাঁটতে পারেন না। হাত বাঁকা। শারীরিক গঠনও ছোট। মা জোসনা বেগমের সহায়তা নিয়ে চলাচল করতে হয় তাঁদের।
বাবুল হাওলাদারের বয়স যখন চার, তখন তাঁর জ্বর হয়। এরপর ধীরে ধীরে তাঁর দুটি পা বাঁকা হয়ে যায়। পা বাঁকা হলেও তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন। বিয়ের পর তাঁর প্রথম সন্তান ছেলে হয়। সবাই আদর করে নাম রাখেন জাকারিয়া। জন্মের পর স্বাভাবিক ছিলেন জাকারিয়া। বাবার মতো তাঁরও তিন-চার বছর বয়সের পর থেকে জ্বর হয়ে ধীরে ধীরে শারীরিক গঠন বদলাতে থাকে। পা ও হাত বাঁকা হয়ে যায়। এরপর দুই সন্তান লাবণ্য ও জিহাদের অবস্থাও জাকারিয়ার মতো হয়। বাবা ঢাকায় ফেরি করে খেলনা বিক্রি করে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। তা দিয়ে চালাতে হয় সংসার। নিজের ঘর নেই। তাঁর এক চাচা তাঁদের থাকতে দিয়েছেন। এই অভাবের মধ্যেও জাকারিয়াসহ তাঁর ভাই-বোন পড়াশোনা শুরু করেন।
শুরুতে জাকারিয়ার হুইলচেয়ার ছিল না। তাঁর মা জোসনা বেগমের কোলে করে স্কুলে যেতেন। এখন হুইলচেয়ারেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন জাকারিয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসেই ল্যাপটপে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। এতে মাসে তাঁর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এই আয় দিয়েই পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে ইন্টারনেটে সমস্যা থাকায় ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না তিনি। তবু তিনি সমাজের বোঝা না হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জাকারিয়ার বাবা বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘আমি ও আমার তিন সন্তানই প্রতিবন্ধী। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে। তবে জাকারিয়া আমাদের অহংকার। কারণ, ও নিজে হাঁটতে না পারলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কম্পিউটারের মাধ্যমে কাজ করে টাকাও আয় করছে।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘জাকারিয়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। তার ও তার পরিবারের জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। তা ছাড়া খুব শিগগির ফিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে টাকা আয়ের জন্য ৬ মাসব্যাপী একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। সেখানে জাকারিয়াকে সুযোগ দেওয়া হবে। ও যদি ভালো করতে পারে, তাহলে ওর জন্য কাজেরও ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি ওর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’