ফরিদপুরী দেশি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের গবেষকেরা মাটি, জৈব সার ও সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফরিদপুরী দেশি জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সম্প্রতি এই গবেষণার কাজ শেষ করেছেন তাঁরা।
গবেষণা মাঠের পেঁয়াজ উত্তোলন করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। এ গবেষণা প্লটের গড় পেঁয়াজের আকার বড় এবং ওজন ৬০-১০০ গ্রাম পর্যন্ত। এই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষ করলে বর্তমান পেঁয়াজের ফলন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে সম্ভব, এমনকি উদ্বৃত্ত হতে পারে।
পেঁয়াজ চাষের গবেষক ছিলেন ওই ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নিশান। এ ব্যাপারে গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সয়েল, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের প্রফেসর মো. সানাউল ইসলাম জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বার্ষিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় প্রায় ২৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। পচনসহ ঘাটতি ধরা হয় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। মাটি, জৈব সার ও সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে উৎপাদন ১০ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি সম্ভব।
সানাউল ইসলাম বলেন, এ ছাড়া একই জমিতে আগাম ও নাবি নামের দুই জাতের পেঁয়াজ চাষ করলে চার-পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ অতিরিক্ত উৎপাদন সম্ভব। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চাষ পদ্ধতির উন্নতি করতে পারলে দেশ অচিরেই চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পেঁয়াজ উৎপাদনে সক্ষম হতে পারে।
আগামী বছর এই মৌসুমে উপকূলীয় লবণাক্ত বটিয়াঘাটা-দাকোপ এলাকায় গবেষণা চালাবেন তাঁরা। গবেষণা প্লটের মধ্যে মাটি, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা নেওয়ায় উৎপাদন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ১৫ টন। উৎপাদিত ৪০-৫০ শতাংশ পেঁয়াজের প্রতিটির গড় ওজন ৭০-৯০ গ্রাম ছিল বলে জানান তিনি।
সানাউল ইসলাম আরও জানান, ২৮ দিন বয়সের চারা ফরিদপুর থেকে এনে ১০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে লাগানো হয়। শুষ্ক মৌসুমে গবেষণা প্লটের লবণাক্ততার মাত্রা ছিল ৪ ডেসিসিমেন্স বা মিটার। প্লটের পেঁয়াজ উত্তোলন করা হয়েছিল। ১৮টি পর্যবেক্ষণ প্লটে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সঠিক চারা ও সারি ঘনত্ব, যথযাথ মাটি, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করে আশাতীত ফলন পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানান গবেষক।