সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা এবার দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ফের আন্দোলনে নামছেন। আগামীকাল শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাগাতার’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নবীন শিক্ষকেরাও এতে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের অন্য দুটি দাবি হলো, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরাও।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি আজ শুক্রবার দুপুরে বলেন, আগামীকাল শনিবার শহীদ মিনারে ২০ হাজার শিক্ষক দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার আদায়ে অবস্থান নেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা আলোচনা করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন দিক বোঝাচ্ছেন। কিন্তু আমরা চাই না। আমাদের কথা তো বহুবার তাঁদের বলেছি, কাজ তো হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় করে আমরা ফিরব।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭ টি। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।
গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা।
খায়রুন নাহার লিপির ভাষ্য, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান। নার্সরা এইচএসসি ও নার্সিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসএসসি ও কৃষি ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পাচ্ছেন। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকেরাও স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি নিয়ে দশম গ্রেড পান। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি এবং সিএনএড বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স করে ১৩তম গ্রেড পান। পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও দশম গ্রেডে বেতন পান। তাই আমরা দশম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করছি।’
তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের নেতা তালুকদার পিয়াস বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার মূলভিত্তি প্রাথমিক স্তর। প্রাথমিক শিক্ষকেরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের প্রথম স্তরে কাজ করেন। এই স্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার মানও দুর্বল হয়। তাই শিক্ষার মূলভিত্তি যাঁরা গড়ে দিচ্ছেন, তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা ও বেতনকাঠামো পাওয়া উচিত। সময়ের প্রেক্ষাপটে সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি।
তালুকদার পিয়াস আরও বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরাও শনিবার প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অবস্থান কর্মসূচিতে শামিল হবেন। আমরা প্রাপ্য মর্যাদা ও বেতন আদায় করে আনাব।’
এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এই তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।