হোম > অর্থনীতি

ব্যক্তিগত পার্কিং ছাড়া গাড়ি নয়, যে আইন জাপানের যানজট কমিয়েছে

জাপানে টয়োটা, সুজুকি, মাজদা, হোন্ডা, মিতসুবিশির মতো বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে দেশটিতে গাড়ির দাম তুলনামূলক কম। কিন্তু এখানে গাড়ির বিক্রি কম। শুধু তা–ই নয়, গাড়ি কেনার প্রবণতা দিন দিন কমছে। 

সস্তা হওয়ার পরও কেন জাপানে গাড়ি বিক্রি বাড়ে না? এর পেছনে প্রধান কারণ জাপানের গাড়ি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জটিলতা। 

জাপানে গাড়ি নিবন্ধন করতে গেলে মালিকদের স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে একটি ‘গ্যারেজ সার্টিফিকেট’ নিতে হয়। মালিককে প্রমাণ করতে হয় তাঁর ব্যক্তিগত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি নিজের বাড়িতে বা মাসিক ভাড়া ভিত্তিক হলেও চলে। 

এ ধরনের সনদ পেতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম কারণ হলো, জাপানে রাতের বেলা রাস্তায় গাড়ি পার্কিং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আর একবার প্রতারণা ধরা পড়লে অভিযুক্ত জাপানের কোথাও আর গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। 

এমন কঠোর আইন করার পেছনে জাপান সরকারের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এ দেশের আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলো বেশ সরু। ফলে রাস্তায় যানবাহনের জট লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মূলত গাড়ির মালিকানা সীমাবদ্ধ করতেই সরকার এমন আইন করেছে। যদিও সেটি সরকার কখনো স্পষ্ট করে বলে না। 

 ১৯৫০–এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৬০–এর দশকের শুরুর দিকে জাপানে গাড়ির মালিকানা বাড়তে শুরু করে। দ্রুতই জাপানের সংকীর্ণ আবাসিক রাস্তাগুলোতে বিপুল গাড়ি পার্ক করার কারণে যানজট বাঁধতে শুরু করে। ট্রাফিক সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। 

 ১৯৬২ সালে জাপানে গ্যারেজ আইন করা হয়। ব্যক্তিগত পার্কিং থাকার বিষয়ে পুলিশের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়। মালিককে প্রমাণ করতে হয়, রাস্তার বাইরে তাঁর গাড়ি পার্ক করার জায়গা আছে। 

অবশ্য জাপানের এই প্রুফ–অব–পার্কিং নিয়মে পার্কিং স্পেসের মালিকানা থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। জায়গা লিজ নিলেও চলে। তার মানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই এমন ভবনে ভাড়া থাকলে যে গাড়ি কেনা যাবে না এমন নয়। শুধু দেখাতে হবে, বাড়ির কাছাকাছি জায়গায় পার্কিংয়ের জন্য ইজারা নেওয়া আছে। 

শুরুতে এই আইন শুধু বড় শহরগুলোর জন্য প্রযোজ্য হলেও পরবর্তীতে তা দেশজুড়েই বাস্তবায়ন করা হয়। 

এই আইনের ফলে দুটি কাজ হয়েছে: বসতবাড়ির কাছাকাছি পার্কিং ভাড়া দেওয়ার আলাদা বাণিজ্য দাঁড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে গাড়ি কেনার প্রবণতাও কমে গেছে। বিকল্প হিসেবে মানুষ উন্নতমানের গণপরিবহনকেই বেছে নিয়েছে। ফলে জাপানে এখনো গণপরিবহন ব্যবহারের সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয়। 

এ ছাড়া প্রুফ–অব–পার্কিং আইনের ফলে আবাসিক ভবনগুলোতে আলাদা করে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা রাখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এতে আবাসিক এলাকার সরু রাস্তায় গাড়ির চাপও পরোক্ষভাবে কমেছে। 

জাপান সরকারের উদ্দেশ্য না থাকলেও এই আইনের কারণে কিন্তু শহরগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রির প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে গেছে। বিশেষ করে শহর এলাকায় যেখানে জমি ও বাড়ির দাম অনেক বেশি সেখানে প্রভাব পড়েছে বেশি। এসব স্থানে পার্কিংয়ের ইজারামূল্যও বেশি। জাপানের মতো দেশে যেখানে উন্নত ও সুলভ গণপরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রয়োজনীয়তাকে পরোক্ষভাবে কমিয়ে দিয়েছে এই আইন। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে জাপানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবসাও জমে উঠেছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে জাপানে গাড়ি বিক্রি ধীরে ধীরে কমছে। কিন্তু কার পার্কিং ব্যবসা জমজমাট হচ্ছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো পার্ক২৪। এই কোম্পানির জাপানজুড়ে ১৬ হাজারের বেশি গ্যারেজ রয়েছে। গাড়ি ভাড়া দেয় এই কোম্পানি। মাসিক প্রায় ৮ মার্কিন ডলার দিয়ে কোম্পানির ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এদের গাড়ি ভাড়া নিলে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বর্ধিত ফি গুনতে হয়। কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ৫ লাখের বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, জাপানের তরুণ–তরুণীদের (২০–৩০ বছর বয়সী) ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। এর একটা বড় কারণ হলো তাঁরা গাড়ির খরচ বহন করতে পারেন না। বাড়ির দাম, ভাড়া এবং পার্কিং স্পেসের ভাড়াও অনেক। এ কারণে পার্ক২৪ কোম্পানির অর্ধেকের বেশি গ্রাহকই এই তরুণ বয়সীরা।

জাপান পুলিশের তথ্য অনুসারে, টোকিওতে একটি পার্কিং স্পটের মাসিক ফি ৩০ হাজার ইয়েন (১৯১ ডলার) থেকে ৫০ হাজার ইয়েন (৩১৮ ডলার) পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে জাপানে ব্যক্তিগত গাড়ির চাহিদা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, ফলে উৎপাদনও কমছে।

পিএসটিসি স্টুয়ার্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড পেলেন ড. নূর মোহাম্মদ

ইবিএল ডিজিটাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস পেল ফুডি

একনেকে ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

কুয়েতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করবে চীন, ৪.১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি

বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় সোনার দাম

আইভাসের নাম বদলে হলো ‘ই-ভ্যাট সিস্টেম’

আমানতের টাকা ফেরত না দিলে সপরিবারে বিষ খেয়ে মারা যাব: এক্সিম ব্যাংকের গ্রাহক

বিবিএসের জরিপ: দেশে পেঁয়াজ, ভুট্টা, সরিষা ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামার আশা সরকারের

বিপিআইয়ের সভাপতি মোশারফ হোসাইন চৌধুরী, মহাসচিব সাফির রহমান