হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), কাস্টম হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস—কেউই এড়াতে পারে না বলে দাবি করেছেন রপ্তানিকারকেরা। ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সম্পৃক্ত বিভিন্ন খাতভিত্তিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) আজ সোমবার রাজধানীর প্যানপেসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে।
রপ্তানিকারকেরা বলেন, এমন একটি সংবেদনশীল স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কেউই যথাযথ মনোযোগ দেয়নি। অথচ সিভিল অ্যাভিয়েশন এই কার্গো ভিলেজের মালিক, কাস্টম কর্তৃপক্ষ আমদানি করা পণ্যের তত্ত্বাবধায়ক, আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস হলো হ্যান্ডলিং এজেন্ট।
তাঁরা বলেন, বর্তমান গুদাম ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল এবং এখনো ম্যানুয়ালি পরিচালিত হয়। এ ছাড়া কাস্টমসের ছাড়পত্র প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রচুর পণ্য জমে থাকে, ফলে সীমিত স্থানের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি ছাড়াও বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিজিপিএমইএ, লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস, ফুট অ্যান্ড ভেজিটেবলস, ওষুধ শিল্প, জুয়েলারি এক্সপোর্টার্স, সুইং থ্রেট, ফ্রোজেন ফুডস, প্লাস্টিক গুডস, সিল্ক গুডস, হস্তশিল্প, ক্র্যাফট অ্যান্ড গিফট ওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট ১৪টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ইএবির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শঙ্কিত এবং আমাদের বিদেশি ক্রেতারাও উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট কার্যকর নয় এবং এটি নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা রপ্তানিকারকেরা অভিযোগ করে আসছি যে, আমাদের পণ্য ও মালামাল খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই এবং প্রায়ই আমদানি করা মালামাল চুরি হয়। এটি শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে এই অগ্নিকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ক্ষতির নিরূপণে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো—
১. সমন্বিত তদন্ত কমিটি গঠন,
২. অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিপরীতে করা বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান।
৩. যে সব পণ্যের বিমা করা ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা প্রদান।
৪.ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ।
৫. ওষুধ শিল্পের জন্য আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা করা।
৬. নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন।
৭.কার্গো ভিলেজের গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করা।