নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চড়া দামে হিমশিম অবস্থা বেশিরভাগ মানুষের। ডলারের সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়িতে কমেছে আমদানি। বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউরোপে তৈরি বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।
ইউরোপে তৈরি মার্সিডিজ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, বিএমডব্লিউ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি টেসলা বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে কম দামি গাড়ির দামও ২ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশে মার্সিডিজ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, অডি, বিএমউব্লিউ ও টেসলার রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) হয়েছে ১ হাজার ৩৫৪টি। এর মধ্যে অডি ২০০টি, বিএমডব্লিউ ৩২৪টি, মার্সিডিজ ১০৬, মার্সিডিজ বেঞ্জ এজি ৩০৮, মার্সিডিজ বেঞ্জ গ্রুপ লিমিটেড ৪১২টি এবং বিদ্যুচ্চালিত টেসলা গাড়ি ৪টি।
বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাইয়ের পরও বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি হয়েছে। ডলারের কারণে দাম বাড়লেও বিক্রি কমেনি। দুই দশক আগে বছরে ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের ৫০-৬০টি গাড়ি আমদানি হলেও এখন হচ্ছে গড়ে ৫০০টি। আগে আমদানি করা মোট গাড়ির মধ্যে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেলের (এসইউভি) সংখ্যা ১০ শতাংশ থাকলেও এখন ৪০ শতাংশ।
বারভিডার সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে গত জুলাইয়ে ২ হাজার ১৯৩টি জাপানি গাড়ি আমদানি হলেও আগস্টে ২ হাজার ১১টি, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৭৯২টি এবং অক্টোবরে ১ হাজার ৫৬৭টি গাড়ি আমদানি হয়। তবে নভেম্বরে বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৪টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ির আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছিল।
মোংলা বন্দর সূত্র বলেছে, এ বন্দর দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৪৭৩টি গাড়ি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ হাজার ৪৮৪টি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৫৭৩টি এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ হাজার ৮১৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এসব গাড়ির মধ্যে রিকন্ডিশন ও বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র বলছে, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৯৫৫টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রায় ৫০০টি।
তেজগাঁও লিংক রোডের মার্সিডিজ বেঞ্জের শোরুমের উপব্যবস্থাপক (বিপণন) ফয়সাল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বছরে তাঁরা ১২০টির বেশি গাড়ি বিক্রি করেন। ২০২২ সালে ১৩০টি গাড়ি বিক্রি করতে পারলেও চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৮০টি। গত বছর ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত এলসি বন্ধ থাকায় গাড়ি আমদানিতে সমস্যা হওয়ায় বিক্রি কমেছে। তবে চলতি বছর তাঁদের লক্ষ্য ১০০টি গাড়ি বিক্রি করা।
বিলাসবহুল গাড়ির আমদানির সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে বিএমডব্লিউ। এটির পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরস। বিএমডব্লিউর শোরুমের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ১৩০টি বিএমডব্লিউ আমদানি হয়, বিক্রি হয় ৫৬টি। বিএমডব্লিউ এক্স সেভেন গাড়ির সর্বনিম্ন দাম ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিপণনপ্রধান আব্দুর রহমান বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৪টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। অর্ডার আছে পাঁচটির। ডলারের কারণে গাড়ির দাম অনেক বেড়েছে। তারপরও মাসে তাঁরা সাত-আটটি গাড়ি বিক্রি করছেন। এ বছর তাঁদের লক্ষ্য ৮০টি গাড়ি বিক্রি করা।
অডির স্থানীয় পরিবেশক প্রোগ্রেস মোটরসের কান্ট্রি লিড (সেলস) সাফায়েত বিন তায়েব বলেন, চলতি বছর আমদানি কম হলেও মজুত থাকায় বিক্রিতে প্রভাব পড়েনি। বছরের শেষ বলে এখন বিক্রি সামান্য কম। ২০২২ সালে ৮০টি এবং চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৫০টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে।
বিলাসবহুল গাড়ির বাজার ভালো হলেও মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের গাড়ির চাহিদা মেটানো জাপানের রিকন্ডিশন ও ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির আমদানি ও বিক্রি গত বছরের মাঝামাঝি থেকে কমেছে। অথচ আমদানি করা গাড়ির সিংহভাগই জাপানের।
বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রি কমেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে গাড়ি আমদানিতে। তিনি বলেন, এসব সংকটের মধ্যেও অনেক শোরুমেই গাড়ি আছে। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রেতা নেই। সংকট কাটলেই গাড়ি বিক্রি বাড়বে।