গত সোমবার (৮ মে) সকালে বালিয়াডাঙ্গী থেকে লাহিড়ী বাজার যাওয়ার পথে চোখে পড়ে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বাইসাইকেলে ঝুলিয়ে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক কিশোরী। সেই সাইকেলের পেছনের একটি অংশ ধরে তার পেছন পেছন হাঁটছেন একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
বাইসাইকেল থামিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা সম্পর্কে বাবা ও মেয়ে। কিশোরীর নাম রিনা রানী (১২) ও তার বাবা সুবেশ চন্দ্র পাল। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা আমজানখোর ইউনিয়নের উদয়পুর বালুবাড়ী গ্রামে তাঁদের বাড়ি।
কথা বলার চেষ্টা করলে রিনা রানী জানায়, এখন কথা বলার সময় নেই তার। কারণ, বাজারে জিনিসপত্র বিক্রি না করতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে তার পরিবারকে। এ কথা বলেই চলে যায় বাজারে।
কাছে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে শুরুতে কেঁদে ফেলেন। এরপর বলেন, ‘মোর মতো কষ্ট আর কুনো মাইনসের নাই, স্বামী জন্ম থেকে অন্ধ, বেহার (বিয়ের) পর থেকে মাইনসের বাড়িত বাড়িত যাই, পয়সা তুলে যা হইতো তাই দিয়া খায়া বাঁচে আছি। একডাই (একটাই) মেয়ে হামার সংসারত, উহার উপরত ভরসা করে সংসারটা চলেছে। মেয়েটা না হলে না খায় মরিবা লাগলেহে (লাগত) হামাক।’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাজার থেকে ফেরেন রিনা রানী ও তাঁর বাবা। সুবেশ চন্দ্র পাল জানান, এখনো মাঝেমধ্যে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি না হলে দোকানে দোকানে ভিক্ষা করতে বের হতে হয়। এ ছাড়া কোনো রোজগারের সুযোগ নেই তাঁর পরিবারের।
রিনা রানী ছাড়াও দুই ছেলে রয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুবেশের সংসারে। লক্ষ্মী চন্দ্র (১৩) ও প্রহ্লাদ চন্দ্র (১৫)। পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় ৪ দিন হলো ঢাকায় পাঠিয়েছেন কাজের সন্ধানে। প্রতিবেশী পরিচিত ব্যক্তি ঢাকায় থাকেন। তাঁর ছেলে দুটোকে রাজমিস্ত্রির লেবার হিসেবে কাজ পাইয়ে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
রিনা রানীর বাবা ও মায়ের শেষ ইচ্ছা, কয়েক বছর পর মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে পাঠাতে হবে। এ জন্য দরকার আর্থিক সহায়তা। স্থানীয়রা বলছেন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবানেরা সহযোগিতা করে কিছু অর্থ দিয়ে বাড়ির পাশে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দিলে পরিবারটির কষ্ট লাঘব হবে। আর ভিক্ষা করতে হবে না রিনা ও তার বাবাকে।
আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকালু (ডংগা) বলেন, ‘পরিবারটি অত্যন্ত গরিব। মেয়েটাকে নিয়ে কখনো ভিক্ষা, কখনো মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে কোনোমতে চলছে।’