এখনো বন্যপ্রাণি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। ঠাকুরগাঁও সদরসহ জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের অনেকেই পূর্বপুরুষের এই পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
গত শনিবার শেষ বিকেলে সদর উপজেলার গৌরীপুর এলাকায় দেখা যায়, কাঁধে বাঁশের ঝুড়ি, হাতে ফাঁদ ও বাঁশি, ব্যাগে সদ্য ধরা কয়েক ডজন ইঁদুর নিয়ে কয়েকজন সাঁওতাল শিকারি মাঠের দিকে যাচ্ছেন।
শিকারি লক্ষ্মীরাম সরেন বলেন, ‘বাপ-দাদার সময় থেকে এই পেশা চলে আসছে। ধানখেতের ইঁদুর আর পাখি শিকার করেই সংসার চলে। অন্য কোনো কাজে দক্ষতাও নেই, সুযোগও পাই না।’
অন্য শিকারি বিশু সরেন এমন পেশা পছন্দ করেন না। তিনি চান না তাঁর সন্তানেরাও এই পেশায় আসুক। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক, ভালো চাকরি পাক। কিন্তু আপাতত শিকারের ওপরই ভরসা।’
শিকারি গরেন টিপ্পো বলেন ‘ধানখেতে ইঁদুর অনেক ক্ষতি করে। আমরা যখন তাদের ধরি আর খাই, তখন আমাদের পেটও ভরে, আবার জমিরও উপকার হয়।’
প্রবীণ শিকারি সুদাম মার্ডি বলেন, ‘বাজারের জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা এই পুরোনো পেশা ধরে রেখেছি।’
জেলা সাঁওতাল কল্যাণ পরিষদের সভাপতি পলাশ হেমব্রম বলেন, ‘শিকার আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করা জরুরি। সরকার ও এনজিও একসঙ্গে কাজ করলে আমরা বিকল্প জীবিকা বেছে নিতে পারব।’
তবে পরিবেশবিদেরা সতর্ক করেছেন, নির্বিচারে বন্যপ্রাণী শিকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। পরিবেশকর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শুধু ইঁদুর নয়, অনেক সময় পাখি, গুঁইসাপ, এমনকি খরগোশও শিকার করা হয়। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের আধুনিক পেশায় যুক্ত করতে দক্ষতা উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে বন্য প্রাণী রক্ষায় তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হবে।