ঠাকুরগাঁওয়ে চলন্ত ‘একতা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতা আল আমিনকে (৩০) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত চার ফেরিওয়ালাকে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। খুনের ঘটনার পর দিনাজপুর রেলওয়ে থানায় মামলা দায়েরের মাত্র ৯ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। নিহত আল আমিন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বতুয়াতলী গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন ঠাকুরগাঁও সদরের ছিট চিলারং গ্রামের ফজলে হকের ছেলে মো. আকাশ (৩০), হরিহরপুর সুগারমিল এলাকার পাগলা মিয়ার ছেলে কুদরত আলী (৩২), রুহিয়া উপজেলার ঘনিবিষ্টপুর গ্রামের বন্দরপাড়ার মো. সুজন (২২) ও হরিহরপুর গ্রামের হাজীপাড়ার সামসুল হকের ছেলে আবু সাঈদ (২৩)।
সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর আল আমিন ঠাকুরগাঁওয়ের রায়পুর এলাকার ভাউলারহাটে ওয়াজ মাহফিলে পপকর্ন বিক্রি করতে যান। সেখানে নারকেল বিক্রেতা (আসামি) মো. আকাশের সঙ্গে পপকর্ন বিক্রয়কে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি হয়। অন্য ফেরিওয়ালা ও স্থানীয় লোকজন সেখানেই তাঁদের আপস-মীমাংসা করে দেয়।
পরদিন ২৪ নভেম্বর (সোমবার) রাতে পপকর্ন বিক্রেতা আল আমিন, মো. মাহাবুব, জানিফ উদ্দিন ও মো. মাহামুদুল দিনাজপুর থেকে পীরগঞ্জে যাওয়ার জন্য ঢাকা হতে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে উঠে বিশ্রাম করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনটি ঠাকুরগাঁওয়ের সেতাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার পর আসামিরা আল আমিনের সঙ্গে মাহফিলের ঘটনার সূত্র ধরে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আসামিরা আল আমিনকে ট্রেনের ‘ঠ’ বগিতে নিয়ে যান।
ট্রেনটি পীরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার আগমুহূর্তে আসামিরা তাঁদের হাতে থাকা চাকু দিয়ে আল আমিনের গলায় ও তাঁকে রক্ষা করতে আসা ফেরিওয়ালা মিলন মিয়ার (১৭) পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। অন্য ফেরিওয়ালারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মিলন মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
এই ঘটনায় নিহত আল আমিনের শ্বশুর আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চার ফেরিওয়ালার (নারকেল বিক্রেতা) নামে দিনাজপুর রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলা দায়েরের পর রেলওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোনাঈদ আফ্রাদের নেতৃত্বে আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ। মাত্র ৯ ঘণ্টার মধ্যে চার আসামিকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় পুলিশ।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোনাঈদ আফ্রাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসামিদের মধ্যে মো. আকাশ ও কুদরত আলীকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর টোল প্লাজা থেকে রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা একটি নৈশকোচে ঢাকা যাচ্ছিলেন। অপর দুই আসামি মো. সুজন ও আবু সাঈদকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা শহরের রেলগেট থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়।