চা-বাগান ও প্রবাসী-অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার। জেলার প্রায় ১৬ লাখ ভোটারকে কাছে টানতে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ভোটারদের মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজারই ৯২টি চা-বাগানের। সাধারণত ভোটও সবচেয়ে বেশি পড়ে তাঁদের। এ ছাড়া রয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন ভোটার। তাই বিশেষ করে চা-বাগান এলাকা এবং নতুন ভোটারদের প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। কেননা অনেক ক্ষেত্রে ভোটের ফল নির্ধারণে তাঁদের নির্ণায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক হবে। এরপর সবাই মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে। দলের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ‘আমরা দলের ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জোট হলে শরিকদের আসন ছাড় দিতে কোনো আপত্তি নেই।’
মৌলভীবাজার-১
জুড়ী ও বড়লেখা নিয়ে গঠিত আসনে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দীন মিঠু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন কাতারপ্রবাসী লুকমান আহমদ। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন জাকির চৌধুরী ও তামিম আহমেদ। জাতীয় পার্টির নেতা রিয়াজ উদ্দিনও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার।
মৌলভীবাজার-২
কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির প্রকৌশলী এম সায়েদ আলী। দীর্ঘদিন ধরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এই আসনের বাসিন্দা হওয়ায় গুঞ্জন রয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিনি এখান থেকে প্রার্থী হতে পারেন। কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গত কয়েক মাসে এলাকায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও তাঁকে প্রত্যাশা করছেন। মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী বলেন, ডা. শফিকুর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় এলাকাবাসী ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখানে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। আশা করি, কেন্দ্র এই দাবি পূরণ করবে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক উপজেলা সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা। প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। আনজুমানে আল-ইসলাহ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ফজলুল হক খান সাহেদও প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক এমপি নবাব আলী আব্বাছ খান। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হতে পারেন সাইফুর রহমান। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।
মৌলভীবাজার-৩
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে এই আসন। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক জেলা আমির আব্দুল মান্নান। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ বিলাল। এনসিপি থেকে এহসানুল হক জাকারিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। এই আসনে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। ভোটের মাঠে দৃশ্যত এম নাসের রহমানের পাল্লা ভারী। তবে হাল ছাড়তে রাজি নয় জামায়াত। নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আব্দুল মান্নান।
মৌলভীবাজার-৪
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নিয়ে গঠিত আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজি মুজিব)। তবে তাঁর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন দলের আরেক নেতা মহসিন মিয়া মধু। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন আসনটি থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব। এনসিপি থেকে প্রীতম দাশ ও খেলাফত মজলিস থেকে নূরুল মোত্তাকিন জুনায়েদ মনোনয়ন পেতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন শেখ নুরে আলম হামিদি। এই আসনের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটারের মধ্যে শুধু চা-বাগানের ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ফলে ভোটের ফল নির্ধারণে এসব বাগানের ভোট বড় ভূমিকা রাখবে।