দুজনেই অটোরিকশাচালক। অটোরিকশা চালানো নিয়ে রাস্তায় কথা-কাটাকাটি। এর জের ধরেই হত্যার পরিকল্পনায় গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। বাসায় নিয়ে নাশতায় বসিয়ে পেছন থেকে প্রথমে দা দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর ব্লেড দিয়ে টুকরো টুকরো করে তিনটি বস্তায় ভরে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে লাশ ফেলে দেন। লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে সিলেট নগরে।
নিহত অটোরিকশাচালক রণজিৎ সরকার (৫৮) নগরের আখালিয়ার দুসকি এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম মৃত বঙ্ক সরকার। তাঁকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে অপর অটোরিকশাচালক আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে। তিনি বাদামবাগিচা এলাকার বাসিন্দা এবং দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকার মির্জাপুর গ্রামের মৃত মখন মিয়ার ছেলে।
আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, শুক্রবার থেকে রণজিৎ নিখোঁজ হলে শনিবার তাঁর ছেলে শংকর (৩৫) সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ রণজিতের সন্ধান শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশের সন্দেহ হয় রিকশাচালক আব্দুল মালেককে। আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে তাঁকে খবর দিয়ে বাসায় আনা হয়। মালিক বুঝতে পারেন, তিনি ধরা পড়ে গেছেন। বাসায় ঢুকে, ‘আমি মালেক রিকশাচালক। আমি একা খুন করেছি। আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছিল। মৃত্যুর আগে কেউ মিথ্যা বলে না। আমার মা-বোন, বউসহ পরিবারের কেউ দায়ী নয়। আমি নিজে নিজে ইচ্ছে করে চাকু দিয়ে মারা গেলাম।’ চিরকুট লিখে নিজেকে ছুরি মেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মালেক। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে মালেক পুলিশের কাছে সবকিছু স্বীকার করে বক্তব্য দেন।
পুলিশ জানায়, মালেকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় নগরের এমসি কলেজের শ্রীকান্ত হোস্টেলের পাশ থেকে রণজিতের খণ্ডবিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুটি বস্তায় পা, মাথা ও শরীর পাওয়া যায়। তবে হাত এখনো মেলেনি। পুলিশ বুর্যে অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরাও সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন।
এসএমপির উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, মালেক জানিয়েছেন, হত্যার পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাসায় এসে দেখেন তিনি ধরা পড়ে যাচ্ছেন। তখনই আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
লাশ উদ্ধার হলেও অটোরিকশাটি এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন নিহতের ছেলে শংকর। তিনি জানান, গত শুক্রবার থেকে বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। শনিবার থানায় জিডি করেছেন। এখন লাশ মিলেছে। মালেককেও তাঁরা চেনেন না। বাবা হত্যার সঠিক বিচার দাবি করেন শংকর।