‘জীবনের প্রথম ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোগান্তিবিহীন বাড়ি যাচ্ছি।’ ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর জাজিরা টোলপ্লাজার সামনে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন বাসযাত্রী এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী থেকে মাত্র ৩৫ মিনিটে এই পর্যন্ত আসলাম। বাকি পথটাও আশা করি নিরাপদে যেতে পারব।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যানবাহনের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালের দিকে চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যানবাহনের চাপ। তবে তা কখনোই যাত্রী বা চালকদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়নি। যাত্রাবাড়ী-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কে একেবারেই স্বাভাবিক ছিল যান চলাচল।
ঈদের আগের সেই চিরচেনা চিত্র বদলে গেছে মাঝিরঘাট ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটের। ফেরিঘাটে নেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি। কিছুসংখ্যক মানুষ লঞ্চে পদ্মা পারাপার হলেও দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা পড়ে আছে ফেরিঘাট। এত বছর যারা এই নৌপথ ব্যবহার করে যাতায়াত করত, তারা এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। দেড় ঘণ্টার ফেরির পথ পদ্মা সেতু দিয়ে পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৭ থেকে ১০ মিনিট। কোনো রকমের ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এখন আর ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না যাত্রী ও চালকদের।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ২৬ জুন থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতুটি। এরপর থেকেই বদলে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা, যার ইতিবাচক প্রভাব ভোগ করছে পদ্মার ওপারের মানুষ।
সায়দাবাদ থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে আসা ছায়রন আক্তার বলেন, ‘পদ্মা সেতু কবে দেখব, সে জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় পরিবারের সব সদস্য অনেক আনন্দ উপভোগ করেছে। আমাদের যোগাযোগে চিরভোগান্তি থেকে মুক্ত করে দিয়েছে পদ্মা সেতু। ঈদে বাড়ি যেতে আগে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টাও ফেরিঘাটে আটকা থাকতে হতো। আর এখন দুই ঘণ্টারও কম সময়ে বাড়ি পৌঁছে যেতে পারব।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতিটি যানবাহনকে টোল দিতে পাঁচ সেকেন্ড সময় লাগে। তাই ঈদে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই টোলপ্লাজা অতিক্রম করছে। টোলপ্লাজার ছয়টি কাউন্টারে ২৪ ঘণ্টা টোল আদায় করা হচ্ছে। আশা করি ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে না যাত্রী ও চালকদের।’