শরীয়তপুরে ছাত্রদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর এনসিপির জেলা কার্যালয় ও এক কর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার।
এর আগে সন্ধ্যায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
এই ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানিয়েছেন পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে এনসিপির জেলা সদস্যসচিব সবুজ তালুকদারের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের গার্লস স্কুল এলাকা থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড় অতিক্রম করে তামিম ফ্যামিলি ফুড সেন্টারের সামনে পৌঁছালে আকাশ নামের ছাত্রদলের এক কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ নিয়ে আকাশের সঙ্গে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ভুল-বোঝাবুঝি থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রদল কর্মী আকাশকে রক্ষা করার জন্য চৌরঙ্গী মোড়ে নিয়ে আসেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে এনসিপির লোকজন ছাত্রদল কর্মী আকাশকে আটকে রেখে মারধর করছে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। উভয় পক্ষ হাতবোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলায় জড়িয়ে পড়ে। হাতবোমা বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার (৩৮), ছাত্রদল কর্মী নিরব তালুকদার (১৮), আকাশ (২২), আরমান (২৬), মামুন (৩০), আবিদ খান (২৮), ইসাহাক সরদার (৩২), যুবদল কর্মী নাঈম ব্যাপারী (২৫), বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ আলীসহ (৫০) আরও কয়েকজন। তাঁদেরকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত যুবদল কর্মী নাঈম ব্যাপারীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
নাঈমকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা পাঠানোর পর উত্তেজিত ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা একযোগে মিছিল নিয়ে এনসিপির জেলা কার্যালয় ও এনসিপি কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে হামলা ও বাঙচুর চালান বলে অভিযোগ এনসিপির।
আজ মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুর জেলা শহরের গার্লস স্কুল-সংলগ্ন এনসিপির জেলা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সব চেয়ার-টেবিল, আলমারি, ফ্যানসহ সবকিছু তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। এদিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়-সংলগ্ন ব্যাপারীপাড়া এলাকায় এনসিপির কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দরজা-জানালা, টিনের বেড়া, চেয়ার-টেবিল, হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়সহ বিভিন্ন মালপত্র ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে।
এ বিষয়ে জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে গতকাল আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করি। আমাদের মিছিলে ছাত্রদলের এক কর্মী ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আমি ওই ছাত্রদল কর্মীকে রক্ষা করার জন্য তাকে চৌরঙ্গী মোড়ে নিয়ে আসি। তখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুজব ছড়ায়, আমরা তাকে আটকে রেখে মারধর করছি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের সাত-আটজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আবারও সংগঠিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এনসিপির জেলা কার্যালয় ও কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত ছাত্রদল, যুবদলের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রদল কর্মী আকাশকে ধরে নিয়ে মারধর করে এনসিপির লোকজন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাদের ওপরও হামলা করে। এনসিপির সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আমাদের সাতজন গুরুতর আহত হন। বোমা হামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এনসিপির লোকজন নিজেরাই নিজেদের অফিস ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে ছাত্রদলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি করছি।’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এনসিপি ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে জানতে পারি এনসিপির কার্যালয় ও একজনের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষই এখনো অভিযোগ দায়ের করেনি। জানতে পেরেছি, দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।’