রাজধানীর আশুলিয়ায় একটি ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের শিশুসহ তিনজনকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় পরিবারে যেন শোকের ছায়া নেমেছে। সেই সঙ্গে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহত মুক্তার হোসেন বাবুলের স্বজন ও এলাকাবাসী।
আজ রোববার বাবুলের গ্রামে বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া গ্রামে স্বজনেরা ও এলাকাবাসী এ দাবি জানান।
গতকাল শনিবার রাতে আশুলিয়ায় নিজ ঘর থেকে মুক্তার হোসেন বাবুল, স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও ছেলে মেহেদী হাসানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী বলছে, দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে জীবিকার তাগিদে বাবুল ২০ বছর আগে ঢাকায় যান। সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোভাবে চলছিল তাঁদের সংসার। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
কোষারাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাবুলের বিরুদ্ধে এলাকায় কখনো কারও অভিযোগ শুনিনি। এমন কী হয়েছে, যার কারণে পুরো পরিবারসহ গলা কেটে হত্যা করা হলো! যারা গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, আমরা এলাকাবাসী তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।’
সপরিবারে ছোট ভাই হত্যার বিচার দাবি করেছেন বাবুলের বড় ভাই আইনুল হক, ইউসুফ আলীসহ স্বজনেরা। তাঁরা বলেন, ‘বাবুল ও তাঁর পরিবারকে হত্যাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
গতকাল শনিবার মরদেহের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ আসায় আশপাশের বাসিন্দাদের সন্দেহ হলে তারা দরজায় ঠেলা দিয়ে দেখতে পান ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। পরে ঘরের বিছানার ওপর মা ও ছেলের রক্তমাখা মরদেহ দেখতে পান তাঁরা। পরে বাড়ির মালিক পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের আরেক রুমে আরেকটি মরদেহ খুঁজে পায়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি স্বামীর মরদেহ।
বাড়ির ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শী দিলদার হোসেন বলেন, ‘আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি। আজকে সন্ধ্যার পর বাসায় এসে দেখি বাসার সামনে প্রচণ্ড ভিড়। পরে শুনতে পাই চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে নাকি তিনজনকে খুন করে রেখে গেছে কেউ। পরে পুলিশ এল। যে ফ্ল্যাটের ঘটনা, তাদের কাউকে আমি চিনি না।’
মোক্তার হোসেনের দুলাভাই রহিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঠাকুরগাঁওয়ে থাকি। অনেকেই ফোন করে খবর নিচ্ছে। কিন্তু আমি তো কিছুই জানি না। মোক্তার সম্পর্কে আমার শ্যালক হয়। আনুমানিক পাঁচ-সাত বছর ধরে তারা ঢাকায় থাকে। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জোহাব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে বিছানার ওপর মা ও ছেলে দুজনের লাশ দেখতে পেয়েছি। পরে পাশের ঘর থেকে আরেকজনের লাশ পেয়েছি। মনে হয় এটি স্বামীর লাশ। ঘরে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। আনুমানিক তিন দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।’