রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বেইনঘরে চরকায় সুতা কেটে চীবর বুনন উদ্বোধন করেন নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা চাকমা।
এর আগে ফিতা কেটে বেইনঘর উদ্বোধন করেন রাজবন বিহার আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও তাঁর শিষ্যসংঘ। পরে পুণ্যার্থীদের পঞ্চশীল গ্রহণ ও মহামঙ্গল সূত্র পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এবারও রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কঠিন চীবর তৈরি শেষে তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে। অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন কয়েক শ বৌদ্ধ ভিক্ষু। এটি রাজবন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবর দান উৎসব। প্রতিবছর প্রবারণা পূর্ণিমা শেষে কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এদিকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ থেকে রাজবন বিহারে অগণিত পুণ্যার্থীর ঢল নামছে। পরিনির্বাণপ্রাপ্ত বৌদ্ধধর্মীয় মহাগুরু শ্রাবক বুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে প্রথম কঠিন চীবর দানোৎসবের আয়োজন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় সুতা কেটে চীবর তৈরির উদ্বোধনের আগে দুপুরে ভিক্ষুসংঘের নিকট পঞ্চশীল (পাঁচ নীতি) গ্রহণ করেন চীবর তৈরিতে অংশ নেওয়া উপাসক-উপাসিকারা।
এরপর মহামঙ্গলসূত্র পাঠের মাধ্যমে বেইনঘরে চীবর বুনন উদ্বোধন করেন বনভান্তের উত্তরসূরি রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। এ সময় রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহসভাপতি নিরুপা দেওয়ান, সম্পাদক অমিয় খাসী, অ্যাডভোকেট সস্মিতা চাকমাসহ অন্য কর্মকর্তা ও পুণ্যার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রাঙামাটি রাজবন বিহারে আয়োজিত কঠিন চীবর দানোৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ। গতকাল বুধবার রাজবন বিহার এলাকা পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন। এ সময় তিনি সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ ভিক্ষুসংঘ, দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং জনসমাগম ব্যবস্থাপনায় তদারকির নির্দেশনা দেন।
পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব। রাজবন বিহারে আয়োজিত এই উৎসব শান্তিপূর্ণ, নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশ সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজবন বিহারে এলাকাজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব এবং পেশাগত অঙ্গীকার।’
উৎসব ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসীম উদ্দীন চৌধুরী, রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহেদ উদ্দিনসহ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করছেন বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।