রাজশাহীতে এক সংখ্যালঘু নারীকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটে ২১ অক্টোবর। তবে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার। এ ঘটনায় সেদিনই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী উত্তম কুমার দাস ওরফে পিন্টু। তবে পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মেহেদী খাঁ (৩৪)। তাঁর বাড়ি জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার জেলেপাড়া মহল্লায়। তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানা গেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই ভুক্তভোগী নারী মেহেদীর প্রতিবেশী।
অভিযোগে উত্তম লিখেছেন, ‘ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। পূর্বশত্রুতার জের ধরে মেহেদী খাঁ, তাঁর বড় ভাই আব্দুল লতিফ খাঁ ও মেহেদীর স্ত্রী আয়েশা বিবি উত্তমের স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর করেছেন। এ ছাড়া তাঁদের যেকোনো সময় কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
মেহেদী খাঁ ওই নারীকে তাঁর হাত দিয়ে ক্রমাগত মারধর করছেন, সাত সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও গতকাল ফেসবুকে ছাড়েন তাহেরপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অলি আহমেদ। এ কারণে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অলি আহমেদ বলেন, ‘আমি ভিডিওটা প্রকাশ করেছি। এ জন্য মেহেদীর ভাই লতিফ খাঁ আমাকে ফোন করেন। পরে মেহেদী কথা বলতে শুরু করে হুমকি দেন যে আধা ঘণ্টার মধ্যে এই ভিডিও মুছে না ফেললে আমার হাত-পায়ের রগ কেটে তারা আমাকে পঙ্গু বানিয়ে দেবে।’
ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে দুই ফুটের একটি রাস্তা আছে। মেহেদীদের দাবি, তারা আমার বাড়ির ভেতর আরও এক ফুট করে জায়গা পাবে। এটা নিয়ে প্রায়ই জাত তুলে গালাগাল করত। আমি লোকজন নিয়ে এসে মাপজোখ করে দেখার কথা বলেছিলাম। সেটা না করে সেদিন গালাগাল করছিল। নিষেধ করলে মেহেদী আমার স্ত্রীকে মারধর করে। তার ভাই এবং স্ত্রী আমার মেয়েকেও মারধর করে।’
তিনি দাবি করেন, মেহেদী জামায়াতের নেতা। ঘটনার দুই দিন আগেই স্থানীয় জামায়াতের নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এর দুই দিন পরেই মারধরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ প্রথমে গড়িমসি করছিল, পরে একটা অভিযোগ নেওয়া হয়। তবে ১০ দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
নারীকে মারধরের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জেলা কৃষক লীগের সদস্য আবদুর রাজ্জাক সরকার বাবু। এতে তিনি মেহেদী খাঁকে তাহেরপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে মেহেদী খাঁ সেক্রেটারি নন বলে দাবি করেছেন তাহেরপুর পৌর জামায়াতের আমির শহীদুজ্জামান মীর। তিনি বলেন, ‘তার কোনো পদ নেই। সে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী। ভিডিওটা আমিও দেখেছি। এটা রাজনৈতিক কোনো বিষয় না।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত জামায়াত কর্মী মেহেদী খাঁ বলেন, ‘৬ সেকেন্ডের ভিডিও দেখে সবকিছু বুঝতে পারবেন না। তারা আমাদের গালাগাল করেছে। এ জন্য আমার সঙ্গে একটু ধস্তাধস্তি হয়েছে।’ কথা বলার জন্য বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।