মিছিলের সামনে নাহিদ ও আখতার। পিকআপের ওপর দাঁড়িয়ে স্লোগানে স্লোগানে রাজশাহী প্রকম্পিত করছেন সারজিস আর হাসনাত। মিছিলের সামনের দিকে যেতে প্রতিযোগিতা চলছে নেতা-কর্মীদের। কিন্তু কিছু নেতা-কর্মী একদমই পেছনে। মুখে মাস্ক, গ্লাভস পরা হাতে তাঁদের পলিথিনের ব্যাগ। মিছিল থেকে কেউ ফেলেছেন পানির বোতল, কেউ ফেলেছেন টিস্যু বা অন্য কিছু। সেসবই কুড়িয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে নিচ্ছিলেন এনসিপির এই নেতা-কর্মীরা।
রোববার বিকেলে রাজশাহীতে এনসিপির জুলাই পদযাত্রায় এমন দৃশ্যই দেখা যায়। নগরের রেলগেট থেকে সাহেববাজার পর্যন্ত পদযাত্রার পুরোটি সময়ই এনসিপি নেতা-কর্মীদের একটি দলকে মিছিলের শেষে থেকে এভাবে ময়লা-আবর্জনা তুলে নিতে দেখা গেছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন এনসিপির জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এটাই তো নতুন চেতনার রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে আমরা যখন দেখলাম, এই শহরে বাইরে থেকে এতগুলো মানুষ এসেছেন এবং শহরটা নোংরা হতে পারে। তখনই আমরা মিছিলের সঙ্গে সঙ্গেই ময়লা-আবর্জনা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ, এই শহর তো আমাদের, এই আঙিনা আমাদের। তরুণেরা যে সবকিছু পরিচ্ছন্ন রাখতে চায়, এটা তার একটা বার্তা। এই অভ্যাস সকলের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়বে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
পরে সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের পতন। এবার আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের পুনর্গঠন। ৫ আগস্ট আমরা গণভবন জয় করেছি, এবার আমরা জাতীয় সংসদও জয় করব। কিন্তু নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারের সুরাহা হতে হবে।’
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের আলোচনা চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যখন মৌলিক সংস্কারের পক্ষে সকলে এক হয়ে যায়। কিন্তু একটি দলের কারণে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা ঐকমত্য কমিশনে আটকে যায়।’
ডিসি-এসপিদের উদ্দেশ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা যে ভালো ব্যবহার করছেন, আমরা জানি, আপনারা চিপায় পড়ে আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন। যদি হাসিনার পতন না হতো, তখন এই ডিসি-এসপিরাই গণভবনে প্রমোশনের জন্য লাইন ধরত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকদের দেখছি। নজর রাখছি। এই সাংবাদিকরাই জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়ার জন্য লেগেছিল।’
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘নতুন জুলাই এসেছে। কিন্তু আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। মনের ভেতরে এখনো আফসোস কাজ করে। ৫ আগস্টে এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম, সেগুলো এখনো পূরণ হয়নি। যত দিন না আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো পূরণ হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের এই জুলাই চলবে। আমাদের লড়াই চলবে।’
এ সময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।