রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ ন ম রাকিবুল ইউসুফের বিরুদ্ধে ‘পার্সেন্টেজ’ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুপালী খাতুন। তাঁর দাবি, উপজেলার জয়নগর ইউপির প্রশাসক থাকাকালে রাকিবুল ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে পার্সেন্টেজ নিতেন। আজ রোববার এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ ডাকযোগে পাঠিয়েছেন তিনি।
রাকিবুল ইউসুফ গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত চার মাস জয়নগর ইউপির প্রশাসক ছিলেন। বর্তমানে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ রুপালী খাতুন।
রাকিবুলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, রাকিবুল ইউসুফ পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পরিষদের সদস্য ও নারী সদস্যদের কাছ থেকে টিআর, কাবিটা ও উন্নয়ন তহবিলের প্রকল্পের কমিশন দাবি করেন। তা না হলে তিনি কাজের চূড়ান্ত ক্লিয়ারেন্স দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই তাঁকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্য সদস্য ও নারী সদস্যদের কাছ থেকেও রাকিবুল ইউসুফ টাকা নিয়েছেন বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
পরিষদের সদস্যরা অভিযোগ করেন, রাকিবুল ইউসুফ ঠিকমতো অফিস করতেন না। সপ্তাহে এক-দুই দিন তিনি আসতেন দুপুর ১২টার পর। দু-এক ঘণ্টা থেকেই তিনি চলে যেতেন। ফলে নাগরিক ভোগান্তি যেমন হচ্ছিল, তেমনি পার্সেন্টেজ দিতে সদস্যরা চরম বেকায়দায় পড়েছিলেন।
ইউপি সদস্যরা জানান, এই অবস্থায় প্রশাসক সরিয়ে জনপ্রতিনিধিদেরই একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সংরক্ষিত নারী সদস্য রুপালী খাতুন উচ্চ আদালতে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত প্রশাসককে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেন। এ নিয়ে গত ১০ জুলাই পরিষদের সভা বসে। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। দায়িত্ব নিতে সম্মত হন প্যানেল চেয়ারম্যান-৩। কিন্তু পরে কয়েকজন সদস্য প্যানেলের ওপরই অনাস্থা আনেন। এ নিয়ে গত ১৬ জুলাই ইউএনওর কার্যালয়ে অনাস্থার ওপর গোপন ভোট হয়। সেখানে প্যানেলের পক্ষে সাতজন ও বিপক্ষে পাঁচজন ভোট দেন। ফলে প্যানেল টিকে যায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন রুপালী খাতুন।
রুপালী খাতুনের অভিযোগ, এখন আবার তাঁকে সরিয়ে প্রশাসক হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিবুল ইউসুফ। অভিযোগে রুপালী খাতুন উল্লেখ করেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিবুল ইউসুফ প্রশাসক হয়ে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি প্রশাসক অপসারণের হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে
৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে হাইকোর্টে লিভ টু আপিল করেছেন।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসক থাকলেই ভালো। পরিষদের স্বার্থে আমি রিট করেছি।’ তবে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, ‘প্রশাসক থাকলে একটা সই নিতেও সাত-আট দিন ঘুরতে হয়। আমরা পরিষদের তরফ থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাই। আমরা ভোটে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছি। প্রশাসক এনে ভোগান্তি চাই না।’
১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হান্নান আহাদ বলেন, ‘প্রশাসক আসায় জনগণ অনেক বিপদে ছিল। এখান থেকে কাগজপাতি নিয়ে দুর্গাপুরে যেতে হতো। সদস্যদের কোনো কাজকাম দিতেন না। আমরা সদস্যরা ভোট করে রুপালী আপাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছি। শুনেছি, এর বিরুদ্ধে আবার সমাজসেবা কর্মকর্তা রিট করিয়েছেন। তিনি নাকি আবার ফিরতে চান।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রুপালী খাতুন বলেন, ‘টিআর, কাবিটা ও উন্নয়ন তহবিলের প্রকল্পের পার্সেন্টেজ না দিলে আগের প্রশাসক কাজের ক্লিয়ারেন্স দিতে চাননি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে আমি নিজেই ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছি। অন্য সদস্যরাও টাকা দিয়েছেন। তিনি আবার ফিরলে আমাদের জিম্মি করে ফেলবেন। জনগণ ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন।’
জানতে চাইলে পরিষদের সাবেক প্রশাসক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আ ন ম রাকিবুল ইউসুফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্সেন্টেজ আদায়ের অভিযোগ একেবারেই সত্য নয়। এটা হয়ে থাকলে তো তিনি তখনই অভিযোগ করতে পারতেন। এত দিন পর কেন, কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করছেন?’ তিনি দাবি করেন, তিনি আবার প্রশাসক হতে চান না। কাউকে দিয়ে আইনি লড়াইও শুরু করেননি। এখন পরিষদের কোনো সদস্য প্রশাসক চেয়ে রিট করলে তাঁর কিছু আসে যায় না।