নেত্রকোনার বারহাট্টায় বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মাছচাষিদের স্বপ্ন। সাত ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬৮৭টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে আনুমানিক ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সব মিলিয়ে ক্ষতি ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পুকুর ও মৎস্য খামারের মালিকেরা।
জানা যায়, গত ১২ জুন থেকে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বারহাট্টায় বন্যার সৃষ্টি হয়। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। কংস, ধনাইখালী, বিশনাই ও গুমাই নদীর প্রবল স্রোতে রায়পুর, সিংধা, সাহতা, বাউসি ও আসমা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যেই উপজেলার ২ হাজার ৬৭২টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬ হাজার ৫২৩টি পুকুরের মধ্যে ৩ হাজার ৬৮৭টি পুকুর পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। অন্যদিকে, উপজেলার ২২ হেক্টর জমির আমন ধান, ২৭ হেক্টর জমির সবজি ও ২৪ হেক্টর জমির পাটখেত বন্যায় ডুবে গেছে।
বাউসি ইউনিয়নের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের বাপ-চাচারা অনেক বছর ধরেই মাছের চাষ করছেন। এবারের বন্যায় আমাদের প্রায় ৮ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অথচ মাছ বিক্রি করে আমাদের ঋণের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। বন্যা সেটি হতে দিল না। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব, সেটি এখন বুঝতে পারছি না। শুধু আমি নই, আমার মতো উপজেলার অনেক মাছচাষির স্বপ্ন এভাবেই ভেঙে গেছে।’
উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামের মাছচাষি আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমি বাউসি ও আসমা ইউনিয়নের হারুলিয়া ও হরিয়াতলা ফিশারির জন্য ৩০ একর জমি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম। প্রতি শতাংশ ৩৪০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আমার ফিশারির কাছে অনেক মানুষের ব্যক্তিগত পুকুর তলিয়ে গেছে। হারুলিয় ও হরিয়াতলা এলাকায় কোনো পুকুর ঠিক নেই। আমার নিজের গ্রামের বাড়ি কুমারপাড়ায়ও চার একরের পুকুরপাড়ে এক ফুট পানি উঠে গেছে।’
মাছচাষি আরও বলেন, ‘আমার মোট ২ কোটি টাকার বেশি মাছ ভেসে গেছে। আমি এখন মূলধন হারিয়ে শূন্য হয়ে গেছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন বলেন, বন্যায় বারহাট্টা উপজেলার কোনো গবাদিপশু মারা না গেলেও খামারিদের অবকাঠামোগতভাবে প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, একে পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণ, তার ওপর পানির প্রচুর স্রোত থাকায় মৎস্যচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুতই নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।