‘কী বলবাম, কথা কইতে গেলেও ভয় করত। কথা কইতেও সাহস পাইছি না। পুলিশ এত নিষ্ঠুর, আমার তরতাজা পোলাডারে গুলি কইরা মাইরালছে। খালি কান্দি আর আল্লাহর কাছে হাত তুইল্লা কই, আল্লাহ আমার পোলাডারে মাফ কইরা দিও। এহন তো দেশ স্বাধীন অইছে। তাই মুখ খুইল্যা কথাগুলা কইতে পারছি।’
কথাগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত মুদিদোকানের কর্মচারী জোবায়ের মিয়ার (১৫) বাবা আজিজুল ইসলাম কুসুমের।
গত ২০ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জোবায়ের মিয়া। সে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের চামারুল্লাহ গ্রামের ইসলাম কুসুম ও নাছিমা আক্তারের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় জোবায়ের মিয়া একটি মুদিদোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করে। গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী ব্রিজের নিচ দিয়ে জোবায়ের মিয়া দোকান থেকে মালিকের বাসায় যাচ্ছিল। এ সময় পুলিশের ছোড়া বেশ কয়েকটি গুলি জোবায়ের মিয়ার বুকে লাগে। তাতে সে সড়কে লুটিয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা তাকে পাশের একটি মসজিদের বারান্দায় রেখে চলে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পরে পরিবারের লোকজন জোবায়ের মিয়ার লাশ শনাক্ত করে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নান্দাইলের চামারুল্লাহ গ্রামে দাফন করা হয়। যে সময় জোবায়ের মিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত হয় তখন ভয়ে পরিবারের লোকজন কাউকে জানাননি।
নিহত জোবায়ের মিয়ার মা নাছিমা আক্তার বলেন, ‘আমি নিজের হাতে গোসল করাইছি। দেখছি আমার পুতের বুকটা গুলিতে ঝাঁজরা কইরালছে। ভয়ে এত দিন কেউ খবর নিছে না। আমার ছেলে মরার বিচার চাইলে তো ডর করে। মুখ বন্ধ করে রাখছি। বোকার তো শত্রু নাই।’