হোম > সারা দেশ > ময়মনসিংহ

খোরাকির চাল বেচেও চলে না সংসার

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজার। সকাল থেকে এখানে জড়ো হতে থাকেন তরুণ থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা। কেউ প্যাকেটে, কেউবা থলিতে করে এনেছেন চাল। ঘরে নেই নুন, তেল, ডালসহ রান্নার উপকরণ। সম্বল বলতে পরিবারের জন্য মজুত রাখা খোরাকির অল্প কিছু চাল। অভাবের তাড়নায় সেই চালও বেচা শুরু করেছেন তাঁরা।

সোহাগী বাজারের বড় মসজিদের সামনে দেখা যায়, প্যাকেটে করে এক কেজি থেকে শুরু করে ১০ কেজি পর্যন্ত চাল নিয়ে বসেছেন অন্তত শতাধিক বিক্রেতা। তাঁদের আনা চাল দর-কষাকষি করছেন ওই হাটে আসা একাধিক ক্রেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা এবং পাইকাররা। 

এ সময় চোখ পড়ে হাটে চাল বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ্ব আবদুল বারেকের দিকে। আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চার ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঈদের আগে বেতন হবে সবার। এখন হাতে টাকা নেই। এদিকে ঘরে নেই নুন, তেল, ডাল, মাছসহ নিত্যপণ্য। আছে শুধু অভাব। 

আবদুল বারেক বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় নিজেদের খোরাকির চাল থেকে পাঁচ কেজি চাল এনে ২৩০ টাকা বিক্রি করেছি। বর্তমান নিত্যপণ্যের বাজারে এই টাকায় কী রেখে কী নেব?’ শুধু আবদুল বারেকই নন ওই হাটে চাল বিক্রি করতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তিরই একই অবস্থা। 

বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সোহাগী ইউনিয়নের ভালুকবেড় গ্রামের ৬৫ বছরের মো. হাদিস মিয়া নামে এক ব্যক্তি খোরাকির সাড়ে তিন কেজি চাল বিক্রি করছেন ১১০ টাকায়। 

আলাপকালে হাদিস বলেন, ‘আমার স্ত্রী ব্যাগে চালগুলো ভরে দেওয়ার সময় বলে দিছে, সাধ্যের মধ্যে অল্প তেল, মাছ আর শাক-সবজি নিতে। কিন্তু এই টাকায় মাছ তো দূরের কথা, মনে হচ্ছে অল্প তেল আর কিছু সবজি ছাড়া হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।’ 

হাটে চাল বিক্রি করতে আসা মোছা. রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি সোহাগী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে। তিনটি প্রতিবন্ধী ছেলে ও একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ঘরে। আমার স্বামী ভিক্ষা করতেন, মারা গেছেন চার বছর আগে। পরে আমিও ভিক্ষায় নেমেছি। ভিক্ষা করে যে পরিমাণ চাল হয়, তা এই হাটে বিক্রি করি। চাল বেচা টাকা দিয়ে সন্তানদের নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি।’ 

 ১০ বছর আগে মারা গেছেন মোসা. জুবেদা খাতুনের স্বামী। বর্তমানে ভিক্ষাবৃত্তি তাঁর জীবিকা। তিনি এই হাটে এসেছেন খোরাকির চাল বিক্রি করতে। আক্ষেপের সুরে জুবেদা বলেন, ‘বাজার করতে গেলে মনে অয় টেহার কোনো দাম নাই। জিনিসপাতির যে দাম। আমরার মতো গরিব মাইনসের মরণ।’ 

বাজারে নিত্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দাম থাকলেও স্থানীয় পাইকারেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য না দিয়ে কম মূল্যে চাল ক্রয় করছেন বলে দাবি করেন জুবেদা। 

হাটে চাল কিনতে আসা একাধিক ক্রেতা স্থানীয় নাঈম বাশার, কাঞ্চন মিয়া, আবু সাঈদ, ফখর উদ্দিন, আবদুল কুদ্দুসসহ অনেকে জানান, বাজারের তুলনায় এই হাটে চালের দাম কম। এ কারণে নিম্ন-নিম্নমধ্যবিত্তরাও এই হাট থেকে চাল কেনেন। 

চালের পুরোনো পাইকার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় স্থানীয়দের নিয়ে আসা চাল কিনতাম। মধ্যে কয়েক বছর এর সংখ্যা একেবারেই কমে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এর সংখ্যা আবার বাড়ছে।’ 

সোহাগী বাজার সমিতির সাবেক সভাপতি ডা. খাইরুল বাশার বলেন, অভাবের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ফের খোরাকির চাল বেচা শুরু করেছেন। বাজারে জিনিসের দাম না কমলে এর সংখ্যা দিন দিন বাড়বেই।

বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে রেলপথ অবরোধ-আগুন, ট্রেন চলাচল বন্ধ

নেত্রকোনায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, নারীসহ আহত ২২

কুয়াশায় যমুনায় আটকা বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীর নৌকা, ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার

ময়মনসিংহে মাজার ভাঙচুর করে মলমূত্র ছিটিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

ভারতে পালানোর সময় বেনাপোল সীমান্তে ময়মনসিংহের যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুন: আরও ৬ আসামি গ্রেপ্তার

বড়দিনের প্রার্থনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি সারোয়ারের জামিন নামঞ্জুর

দুর্গাপুরে বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত

ময়মনসিংহে হোস্টেল থেকে কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার