লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় চাহিদামতো সার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ কৃষকেরা লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার অডিটরিয়াম চত্বর এলাকায় ‘মেসার্স মোর্শেদ সার ঘর’-এর সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
কৃষকেরা জানান, লালমনিরহাটের ব্র্যান্ডিং পণ্য ভুট্টা। সেই ভুট্টা চাষাবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষাবাদ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। কয়েক দিন ধরে কৃষকেরা সার পাচ্ছিলেন না। উপজেলা সদরে বিএডিসি ও বিসিআইসির পরিবেশক মেসার্স মোর্শেদ সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে রোববার সকালে সিংগিমারী ইউনিয়নের চাষিদের কাছে সার বিক্রি করা হবে।
কৃষকেরা সকালে সেখানে ভিড় জমান। মুহূর্তে সার ক্রেতার দীর্ঘ লাইন হয় ওই বিক্রয় পয়েন্টে। কিন্তু কৃষকদের চাহিদামতো সার না দিয়ে হঠাৎ বিক্রয়কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কার্তিক বর্মনের সহযোগিতায় পরিবেশক সারগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে পরিবেশক ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
কৃষকদের ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম ও জাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁদের তিন বিঘা জমির জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োজন। কয়েক দিন ঘুরেও তিনি সার পাননি। রোববার সকালে সার পাওয়া যাবে শুনে গেলেও চাহিদামতো সার না থাকায় ফিরে আসতে হয়। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষকদের সার না দিয়ে বেশি দামে খুচরা ও কালোবাজারে বিক্রি করছেন ডিলাররা। দুর্নীতিবাজ ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন তাঁরা।
আরেক কৃষক কিসমত আলী বলেন, ‘ভুট্টাখেতে এখনই সার দেওয়ার সময়। আজ-কালকের মধ্যে সার না পেলে ভুট্টা রোপণ সম্ভব হবে না। আমার মতো অনেক কৃষক সার পাচ্ছেন না। এবার ভুট্টার আবাদ কী হবে আল্লাহ জানেন।’
মেসার্স মোর্শেদ সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুর মোর্শেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাইখুল আরেফিন বলেন, ‘জেলায় সারের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। মাসের শেষ দিন তাই এমনটি হতে পারে। একদিন পরই নতুন মাসের বরাদ্দের সার আসছে। সুতরাং কোনো সংকট নেই এবং সংকট থাকবেও না। কিছু মানুষ ডিলারের প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নিতে বা তাঁর ডিলার পয়েন্ট বাতিল করতে এমনটি করতে পারে বলেও তথ্য রয়েছে।’
ইউএনও শামীম মিঞা বলেন, ‘সারের মজুত ও বিক্রির হিসাব নেওয়া হচ্ছে। হিসাবে গরমিল পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত কৃষকদের শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।’