অর্থাভাবে নিভে যাচ্ছে লালমনিরহাটের সাত বছরের শিশু সাব্বির রহমানের চোখের আলো। সন্তানকে বাঁচাতে বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছেন তার অসহায় বাবা রবিউল ইসলাম। সাব্বির রহমান লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সিংগারদার গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।
জানা গেছে, তিন মাস আগে চোখ ওঠে ও জ্বর হয় সাব্বিরের। এরপর স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের কাছে ওষুধ খেয়ে শরীর ফুলে যায় ও ফোসকা ওঠে। তখন তাকে ভর্তি করা হয় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে। সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ তপন কুমারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে এক সপ্তাহ। এ সময়ে তার পুরো শরীরের মাংসে পচন ধরে। বাধ্য হয়ে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকেরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ২৩ দিনের চিকিৎসায় শরীরের পচন রোধ হলেও চোখ আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে দুই চোখ নষ্ট হতে বসে। চক্ষু বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে দ্বীপ আই কেয়ার হাসপালেও চিকিৎসা করানো হয় সাব্বিরকে। কোনোভাবেই তার চোখ ভালো করতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের পরামর্শে সাব্বিরকে ঢাকা ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা দ্রুত তাকে চোখে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। দ্রুত অপারেশন না করলে চিরদিনের মতো চোখের আলো নিভে যাবে সাব্বিরের। এই অপারেশন করতে খরচ পড়বে ৬-৭ লাখ টাকা। খরচের কথা শুনে হতবাক সাব্বিরের বাবা রবিউল ইসলাম। একটি কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করা রবিউল ইসলামের সঞ্চয়ে যা ছিল, সব তিন মাসে সন্তানের পেছনে খরচ করে বর্তমানে শূন্য। সন্তানকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের পেছনে ছুটতে ছুটতে একপর্যায়ে চাকরিও চলে যায় রবিউলের।
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ওষুধ কিনে দিলেও চোখের আলো ফেরাতে অপারেশন করা তার সাধ্যের বাইরে। বাধ্য হয়ে সন্তানকে বাঁচাতে বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছেন সাব্বিরের বাবা রবিউল ইসলাম। বাড়িভিটার দুই শতক জমি ছাড়া তাঁর সম্পত্তি বলতে দুই ছেলেই। বড় ছেলে সাব্বির প্রথম শ্রেণির ছাত্র। তার অসুস্থতার কথা শুনে কেউ পাশে ভেড়ে না। বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা।
সাব্বিরের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘তিন মাস আগেও আমার সাব্বির বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে যেত। আজ তিন মাসের মাথায় চোখের আলো হারাতে বসেছে। তার চিকিৎসা করাতে পারছি না আমরা। তার চোখের আলো ফেরাতে ৬-৭ লাখ টাকা লাগে। কোথায় পাব এত টাকা? চোখের সামনে ছেলেটা অন্ধ হয়ে যাবে ভাবতেই বুকটা কেঁপে ওঠে। কেউ ঋণে টাকা দিলেও গ্রহণ করে সন্তানকে বাঁচাতাম।’ সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন তিনি।
সাব্বিরের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আদরের সন্তান সাব্বিরকে সুস্থ করতে চিকিৎসকদের পেছনে ছুটতে ছুটতে চাকরি হারালাম। সঞ্চয় যা ছিল সব শেষ। এখন আমি শূন্য পকেটে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছি। তবু সন্তানের অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে পারছি না। চোখের সামনে আদরের সন্তান ছটফট করছে। বিত্তবানেরা এগিয়ে এলে আমার আদরের ধন তার চোখের দৃষ্টশক্তি ফিরে পেত।’